বুধবার, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
Jamat-Amir
Jamat-Amir

”আগে গণহত্যার বিচার, পরে আ.লীগের রাজনীতির অধিকারের প্রশ্ন”

নিজস্ব প্রতিবেদক॥
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল নয়, বরং গণহত্যাকারী একটি সিন্ডিকেট বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, আগে গণহত্যার বিচার হোক, এরপর ক্ষতিগ্রস্তরাই রায় দেবেন ওনারা (আওয়ামী লীগ) এদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে কি না।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে বরিশাল নগরের হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ইদগাহ ময়দানে জামায়াতে ইসলামী বরিশাল মহানগর ও জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাংলাদেশে আমরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করছি। আমাদের মাঝে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি আছে। কিন্তু একটা গোষ্ঠী বাংলাদেশকে সাড়ে ২৩ বছর শাসন করেছে বিভিন্ন পর্বে। তারা এই বাংলাদেশকে এক থাকতে দেয়নি, জনগণকে টুকরা টুকরা করে বিভক্ত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ, মেজরিটি-মাইনরিটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম ফ্যাসিজমকে বিদায় করার জন্য। সাড়ে ১৫ বছর আমরা দফায় দফায় আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, ফ্যাসিজম বিদায়ে আমরা হয়তো ভিত রচনা করেছি; কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বিদায় করতে পারিনি। শেষ আন্দোলনটা রাজনৈতিক ছিল না, ছাত্র-যুবসমাজের একটা অধিকারের আন্দোলন ছিল। তারা কোটা সংস্কারের দাবি করেছিল। আর সরকার তাদের দমন করার জন্য হাতুড়ি বাহিনী পাঠিয়েছে। ওরা আমাদের ছেলেদের পিটিয়েছে, কলিজার টুকরা মেয়েদেরও পিটিয়েছে। এ অবস্থা দেখে একটি ছেলে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল এবং বলেছিল—বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। দুনিয়ায় মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য অনেকেই মারা যায়, কিন্তু ডানা মেলে বুকে গুলিকে আলিঙ্গন করেছেন একমাত্র ব্যক্তি আবু সাঈদ। আমরা এ সন্তানের জন্য গর্বিত।

জামায়াত আমির বলেন, এত এত ঘটনা কেন ঘটলো? একটা দল ও একজন ব্যক্তির রাক্ষুসে মানসিকতার কারণে এমনটা হয়েছে। তারা ক্ষমতার রাক্ষস, তারা অর্থের রাক্ষস; তারা দাম্ভিক ছিলেন, বড় অহংকারী ছিলেন; মানুষকে এবং বিভিন্ন দলকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। তারা মানুষ বলে কাউকে সম্মান করেননি। দুনিয়ার পাওনা তারা কিছুটা পেয়েছেন, কিছুটা বাকি আছে। যেহেতু তারা গণহত্যাকারী ব্যক্তি ও দল, সেই কারণে আমরা চাই গণহত্যাকারী ব্যক্তি ও দলের প্রত্যেকের ন্যায় বিচার হোক।

গণহত্যার অভিযোগ মাথায় নিয়ে পালানো আসামিদের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিদেশে যারা আছেন তাদের বলছি- সত্যি যদি দেশটাকে ভালোবাসেন তাহলে চলে আসেন। কী হয়েছে, অসুবিধা নেই। আপনাদের আমলে আমরা দফায় দফায় জেলে গিয়েছি, আমাদের কেমন রেখেছিলেন; এখন এলে আপনারা না হয় সেটি দেখার সুযোগ পাবেন। আপনারা মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষী দিয়ে পাতানো আদালত দিয়ে আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিয়েছেন, খুন করেছেন। কিন্তু আপনারা তো প্রকাশ্য দিবালোকের খুনি, বিশ্ববাসীর সামনে খুন করেছেন। তখন কোথায় ছিল আপনাদের মানবিক সত্তাটুকু, কীভাবে পারলেন গণহত্যা চালাতে। ইন্টারনেট বন্ধ করে লাশগুলো গুম করতে কীভাবে পারলেন। আজও অনেকে স্বজনের লাশ পাননি বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি বলেন, আগে গণহত্যার বিচার হোক, ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা আগে তাদের ইনসাফ পাক। এরপর তারাই রায় দেবেন ওনারা এদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখেন কি না। রাজনীতির নাম যদি গণহত্যা হয়, তাহলে এমন দল বাংলাদেশের জনগণ বরদাশত করবে না। তবে রাজনীতির নাম যদি জনকল্যাণ হয়, তাহলে জনগণ যাকে পছন্দ করবে তাকে বরণ করবে। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে তারা রাজনৈতিক দল নয়, বরং গণহত্যাকারী একটি সিন্ডিকেট। আমরা যা বললাম, আদালতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করুক এটা সত্য না মিথ্যা।

দক্ষিণাঞ্চলের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, ভোলা থেকে গ্যাস সারা বাংলাদেশে যাক, কিন্তু আগে বরিশালে আসুক। যেমন আমি এটা চাই, তেমনি বরিশাল থেকে একটি সেতু ভোলাতে যাক সেটাও আমি চাই। ভোলাবাসী কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে, তাদের তো এদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রয়েছে, তারা তো এদেশের নাগরিক। সব দাবির সঙ্গে আমার আরেকটা দাবি, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভোলাকে ব্রিজ দিয়ে সংযুক্ত করতে হবে। সরকারের কাছে দাবি জানাই, বরিশালের অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে, কিন্তু যে বিষয়গুলোর সমাধান হয়নি; সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। তারা উদ্যোগ নিয়ে শেষ না করতে পারলে পরবর্তী সরকার এসে শেষ করবে। কিন্তু আমরা চাই উদ্যোগটা তাদের হাতে হোক। আমরা ভোলাকে একটি উন্নত জেলা হিসেবে দেখতে চাই, গোটা বরিশাল বিভাগকে আমরা একটি উন্নত বিভাগ হিসেবে দেখতে চাই। ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল, আমরা চাই এর সঙ্গে সোনার থালা যোগ করতে।

তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য যেখানে পানি সম্পদের উন্নয়ন দরকার সেটা হোক, যেখানে ভূমির উন্নয়ন দরকার সেটা হোক, যেখানে যোগাযোগের উন্নয়ন দরকার সেটা হোক এবং উন্নয়নটা বৈষম্যহীনভাবে সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাক। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি আমাদের এই জমিনের মানুষের খেদমত করার সুযোগ দেন, তাহলে আপনারা যে দাবিগুলো করলেন, আমরা ইনসাফ এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য ও গুরুত্ব দিয়ে তা করবো। জনগণের ভালোবাসা একটু কম পেয়ে অপজিশন গ্যালারিতে বসলেও এ দাবিগুলো আদায়ের জন্য আপনাদের যে আওয়াজ উঠবে, তার সঙ্গে আমাদের গলাও মিলে যাবে ইনশা আল্লাহ। দাবি আদায়ে আপনাদের হাত উঠলে আমাদের হাতও উঠবে। অতীতের সমস্ত দুঃশাসন এবং দুর্নীতিকে কবর দিয়ে সামনে এগিয়ে আমরা দল মত জাতিভেদে নির্বিশেষে ইনসাফের বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিদায় হয়েছে, এই দেশে ফ্যাসিবাদী হয়ে আর কেউ মাথা তুলতে পারবে না। চাঁদাবাজ, লুণ্ঠনকারী, দখলবাজ- তোমাদের বাংলাদেশ আর কখনো কবুল করবে না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগোতে হবে। ঐক্যবদ্ধ জাতির মাধ্যমে নতুন কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ, সাম্যের বাংলাদেশ, মানবিক বাংলাদেশ আল্লাহ আমাদের দান করুন। এ কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বক্তারা বক্তব্য রাখেন।

আরো পড়ুন

excident

বিএম কলেজ সংলগ্ন সড়কে শিশু নিহত, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশাল নগরীর ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ বছরের শিশু জান্নাত নিহত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *