বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
BU VC
BU VC

ডামি নির্বাচনের পক্ষে বিবৃতিকারী সুশীল ছিলেন ববির ভিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার উপাচার্যকে ফ্যাসিস্টের দোসর বললেন বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ। ববি পরিবারের সবাইকে ফ্যাসিস্ট বলায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেছেন তারা। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ববির গ্রাউন্ড ফ্লোরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলা হয়।
ববির সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলি বিষয়ে শিক্ষক সমাজের প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যকালে শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, আমরা ববি পরিবার গত কয়েকদিন ধরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ, প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ নি¤েœ তুলে ধরছি।

এ সময় তিনি বলেন, ববির উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন ১৬ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ববির সব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীকে ফ্যাসিস্ট বলে গালি দিয়েছেন। অথচ ববিই বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান যেখানে বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে পেটোয়া পুলিশ বাহিনীকে প্রতিহত করে প্রথম বিজয় অর্জন করেছিল। সেই অকুতোভয় শিক্ষার্থীদের সমর্থনে ববির শিক্ষকরা সব ধরনের হয়রানি ও নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে প্রেস রিলিজ বিবৃতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

অপরদিকে আমরা প্রমাণ সহকারে জানি উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন নিজে ছিলেন ফ্যাসিস্ট শক্তির একজন চিহ্নিত দোসর। ২০২৪ সালের আমি-ডামির নির্বাচনের পক্ষে দাঁড়িয়ে বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষক ও পেশাজীবীরা যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তাদের সেই বিবৃতিপত্রে ১০৮ নম্বর স্বাক্ষরকারী ছিলেন আজকের এই উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন। এমন চিহ্নিত ফ্যাসিস্ট ববি পরিবারের সবাইকে ফ্যাসিস্ট বলেছেন, এর চেয়ে লজ্জার ও ঘৃণার কিছু হতে পারে না। আমরা তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই এবং আমরা দাবি জানাচ্ছি এই বক্তব্যের জন্য ববির সব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর কাছে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।

তিনি বলেন, তিনি এ সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এযাবৎকালের সব নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। এই কথার মাধ্যমে তিনি ববির প্রত্যেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে অন্যায়ভাবে আহত করেছেন। আমরা তার এই বক্তব্যেরও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই কথার জন্যও তাকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

তিনি বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর ববির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বিগত পাঁচ মাসেও তিনি একটি সিন্ডিকেট সভা ডাকতে পারেননি, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৮(২) ধারামতে প্রতি ৩ মাসে একটি সিন্ডিকেট সভা আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১১ ফেব্রুয়ারি এ মর্মে পত্র দেওয়া হয় যে, ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩টায় ভিসির বাসভবনে একটি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য ড. মো. মুহসিন উদ্দীন আমাদের জানিয়েছেন যে, ওই আহ্বানপত্রের সঙ্গে কোনো আলোচ্যসূচি দেওয়া হয়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অনুমিত হয় যে, এটি ছিল একটি গোপন এজেন্ডার দুরভিসন্ধিমূলক সিন্ডিকেট সভা।

শিক্ষার্থীরা এই সিন্ডিকেট সভা না হতে দেওয়ার লক্ষ্যে ভিসির বাসভবনের মূল গেটের সামনে জড়ো হয়ে সদস্যদের ঢুকতে বাধা দেয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য ড. মো. মুহসিন উদ্দীন গেটে অপেক্ষা করতে থাকেন যাতে প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় হলেও তারা সভায় ঢুকতে পারেন। কিন্তু আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা ঢুকতে পারেননি। তখন রেজিস্ট্রার তাদের একজনকে জানান যে, সভাটি একমাত্র আলোচ্য বিষয়ের বিশেষ সভায় রূপান্তর করা হয়েছে এবং তারা যেন অনলাইনে সভায় অংশ নেন। কিন্তু তখন রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে অনলাইনে আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগই ছিল না।

কার্যদৃষ্টে মনে হয় কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেই ছিল এই সদস্যরা যাতে আলোচনায় কার্যকর অংশ নিতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করা। এছাড়াও সদস্যদের বিবেচনা অনুযায়ী সেই একমাত্র আলোচ্য বিষয়টি আইনিভাবে বৈধ আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠার যোগ্য ছিল না। আলোচ্য বিষয়টি ছিল, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শৃঙ্খলা বোর্ড বা সংবিধি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মচারী আইনানুযায়ী শৃঙ্খলা আইন প্রযোজ্য হবে মর্মে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ’।

খুবই অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর এক আলোচ্য বিষয়। শৃঙ্খলা বোর্ড কীভাবে সংবিধির বিকল্প হতে পারে আল্লাহ মালুম! শৃঙ্খলা আইন নামে বাংলাদেশে কোনো আইন আছে বলে আমরা শুনিনি। এছাড়া ববির আইনের ৩৫, ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ ধারায় সংবিধি ও বিধি প্রণয়নের যে বিধান রয়েছে তদনুযায়ী সরকারি কোনো বিধি এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সর্বোপরি আলোচ্য বিষয়টি যেভাবে লেখা হয়েছে তাতে দেখা যায় ওই সরকারি আইন বা বিধি ববির জন্য প্রযোজ্য হবে, এমন সিদ্ধান্ত আগে নিয়ে তারপরে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে, যা কার্যত আর আলোচনার সুযোগই রাখে না। এ বিবেচনায় নিয়ে ওই তিন সদস্য সভাটি বয়কট করেন।

জানা যাচ্ছে, স্বেচ্ছাচারী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সদস্যের অংশগ্রহণ ব্যতীতই ওই সভা অনলাইনে সম্পন্ন করেছেন এবং সেখানে ববি আইনের ৩৫, ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ ধারার নির্দেশনা অমান্য করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা আইন বা বিধি ববির জন্য প্রযোজ্য হবে। এরূপ সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইনটেলেকচুয়াল ও অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে হরণ করবে বলে আমরা মনে করি। তাই এই অবৈধ সিদ্ধান্তের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রবিক্ষোভ বিষয়ে উপাচার্যের নির্দেশে মামলা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি এবং সেই মামলার এজাহারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও সিন্ডিকেট সদস্য মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের বিরুদ্ধে এমন মামলার এজাহারে অভিযোগের ঘটনা অত্যন্ত নজিরবিহীন ও ন্যক্কারজনক। আমরা এই ঘটনারও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এই অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সব মামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও মামলা অতি দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের সব ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবির প্রতিও আমরা সুদৃঢ় সহমত পোষণ করছি। আমাদের এই প্রতিবাদ বিবেচনায় নিয়ে সব দাবি অবিলম্বে পূরণপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য উপাচার্যের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। এই দাবি উপেক্ষা করা হলে শিক্ষক সমাজ কঠিনতর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে সিন্ডিকেট সদস্য ড. মুহসিন উদ্দীনসহ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন

Barishal

বরিশালে ৩ দিনব্যাপী একুশের অনুষ্ঠান শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা থেকে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *