এইচ এম আনিছুর রহমান, মেহেন্দিগঞ্জ: মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার শুরু হয়েছে প্রাচীনকাল থেকে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করে তুষ্ট থাকতাম। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন বদলের পালা যখন শুরু হয়েছে, তখন থেকেই মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর কমতে শুরু করেছে। এখন মানুষ প্লাস্টিক, কাঁচ, অ্যালুমিনিয়াম, সিলভার, মেলামাইন ইত্যাদির তৈরি জিনিসপত্র কিনতে বেশি আগ্রহী।
অথচ মাটির তৈরি জিনিসপত্রগুলোতে শৈল্পিক কারুকাজ আছে এবং এগুলো দেখতে অনেক সুন্দর হয়। একজন মৃৎশিল্পী যখন মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করেন তখন তিনি চেষ্টা করেন নিঁখুতভাবে এবং যত্ন সহকারে সেটা তৈরি করতে। মাটির তৈরি জিনিসপত্রে অনেক কারুকাজ দেখা যায়। এগুলো শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় কারুকার্যমণ্ডিত হয়। অথচ মেলাইন আর প্লাস্টিক এর জিনিসপত্রগুলো তৈরি হয় আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে।
বর্তমানে একজন কুমোর কিংবা মৃৎশিল্পী যতটুক পরিশ্রম করে কারুকার্যখচিত মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করেন তার ন্যায্যমূল্য তারা পান না। স্টিল কিংবা প্লাস্টিকের জিনিসপত্রগুলো টেকসই হয়, তাই মানুষ এই জিনিসগুলোর প্রতি বেশি আগ্রহী। অথচ মাটির তৈরি জিনিসপত্রগুলো পরিবেশবান্ধব।
মাটির তৈরি জিনিসপত্র ভেঙে গেলে কিংবা নষ্ট হলে সেগুলো পরিবেশের কোন ক্ষতি করে না, অপরদিকে ভাঙা প্লাস্টিক পণ্য পরিবেশের অনেক ক্ষতি সাধন করে। এটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু আপনার আমার প্রথম পছন্দ হল প্লাস্টিক পণ্য। আগে মাটির তৈরি থালা-বাসন থেকে শুরু করে বাচ্চাদের খেলনা পর্যন্ত সবকিছুই ছিল মাটির তৈরি। হাট-বাজারে মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র কিনে তৃপ্তি পেত। আর মৃৎশিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত অনেক মানুষ। এমন কিছু পরিবার ছিল যারা উত্তরাধিকার সূত্রে মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করতেন। কিন্তু মৃৎশিল্পের বাজার কমে যাওয়ায় তারা তাদের পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত মানুষদের উৎসাহ প্রদান করতে হবে এবং আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। তাছাড়া মাটির তৈরি জিনিসপত্রের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পর্যটন এলাকাগুলোতে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের দোকান তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, যেন এগুলো বিলুপ্ত হয়ে না যায়।