দরদ্রিতাকে হার মানিয়ে, জিপিএ -৫ পেল বরুন কৃষ্ণ শীল
বুলবুল আহমেদ, রাজাপুর প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের গ্রামের দরিদ্র চা বিক্রেতার ছেলে বরুন এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে নজির স্থাপন করেছে। দারিদ্র্য ও অভাবের মাঝেও পড়াশোনায় কঠোর পরিশ্রম এবং একনিষ্ঠ মনোযোগের মাধ্যমে সে নিজের লক্ষ্য অর্জন করেছে।
বরুণ কৃষ্ণ বাঁধন রাজাপুর গ্রামের
বাদল কৃষ্ণ শীলের ছেলে।বাদল কৃষ্ণ শীল স্থানীয়ভাবে একজন ক্ষুদে চা বিক্রেতা। তাদের সংসারে তিন সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগানো ছিল তার জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। তবুও বাবা-মায়ের সাধ্যমতো চেষ্টা ছিল তাকে লেখাপড়া শেখানোর, যদিও প্রাইভেট পড়ানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না।
বরুন কৃষ্ণ শীল রাজাপুর উপজেলার রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান
বিভাগ থেকে অংশ নেয়। ১০ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে সে সবার চোখে বিস্ময় এনে দেয়, অর্জন করে জিপিএ-৫।বরুনের এই সাফল্য তার পরিবার ও গ্রামের মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বরুর শীল দৈনিক বাংলাদেশ বানী কে জানায়,আমি মূলত আমার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন ৩০ নং রাজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাটিয়েছি। এরপরে আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ- ৫ পাই। আমি সেখান থেকে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পাই।এরপরে আমার বাবা আমাকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি করান। সেখানে আমি মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া শুরু করি। এরপর ধীরে ধীরে স্কুলে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক এবং উপজেলা জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে আমি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। এর মাধ্যমে আমি বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট অর্জন করেছি। আমার বাবা একজন চা দোকানদার। আমরা তিন ভাই। এক ভাই খুব ছোট আর আমরা যে দুই ভাই বড় আছি আমরা দুজনেই বিদ্যালয় পড়াশোনা করি। আমার বাবা খুব কষ্ট করেই সংসার এবং আমাদের পড়ালেখা চালায়। তবুও আমি হাল ছাড়িনি,আমি আমার নিজের চেষ্টা দিয়ে কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাই এবং নিয়মিত স্কুলে যেতাম। আমার বিদ্যালয় শিক্ষকেরা আমাকে খুবই পছন্দ করতেন। এরপরে আমি আস্তে আস্তে সপ্তম শ্রেণি, অষ্টম শ্রেণি, নবম শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হই। আমার এই সকল পরিশ্রমের পিছনে আমার বাবা আমাকে খুব উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি সবসময় চান আমি যেন বড় হয়ে ভালো কিছু করতে পারি। আমি সবসময় তার পরিশ্রমের কথা স্মরণ রাখতাম। তারপর আমি যখন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি, আমার সকল শিক্ষকেরাই আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন। এরপরে আমি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং এর কিছুদিন পর আমার পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয় এবং অবশেষে আমি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করি। আমার এই জিপিএ -৫ অর্জনের পিছনে আমার বাবা-মা ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। আমি আমার নিজের চেষ্টায় এবং তাদের অনুপ্রেরণায় এতদূর আসতে পেরেছি। আমি তাদেরকে সবসময় আমার মন থেকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের ভালোবাসা এবং সহযোগিতাই আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। আমার বাবা যতটুকু কষ্ট করেন এবং করছেন সবটুকুই আমার ভালোর জন্য করছেন যেন আমি বড় হয়ে একটি ভালো কিছু করতে পারি এবং নিজের মা-বাবার কষ্ট দূর করতে পারি। আমি মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হওয়ার পরই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন স্থির করি।এর মাধ্যমে আমি আমার নিজের সমাজ ও দেশের উন্নতি করতে চাই।
রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বরুনের ফলাফল নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। বরুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে নিয়মিত স্কুলে আসত এবং স্কুলের সকল ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করত। বরুনের পরিবার নিম্নবিত্ত হওয়ায় আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষ যথাসাধ্য পরিমান সহযোগিতা করেছি পড়াশোনা করার জন্য বরুনকে।আমি বরুনের জীবনের সাফল্য কামনা করছি।
বরুনের পিতা বাদল কৃষ্ণ শীল অনুভূতি জানাতে গিয়ে কান্না স্বরে বলেন ভগবানের কৃপায় আমার ছেলে জিপিএ -৫ পাইছে। অর্থের অভাবে আমি আমার ছেলের বিদ্যালয়ের খরচ ও প্রাইভেট খরচ দিতে পারিনি।তারপরে ও আমার ছেলে নিজের চেষ্টায় ও শিক্ষকদের সহায়তায় ভালো রেজাল্ট করেছে।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।