শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

ইন্দুরকানীতে রোগীকে আতঙ্কিত করে চলছে সিজার বানিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে সেবার নামে চালাচ্ছে রমরমা ক্লিনিক ব্যাবসা। মূলত গর্ভবতী মায়েদেরকে আতঙ্কিত করে নানান ভয় দেখিয়ে অযথা সিজার করানোই এই ভুয়া ডাক্তারের প্রধান টার্গেট।

সম্প্রতি এমন একটি ঘটনার অভিযোগ উঠেছে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত মাতৃসেবা ক্লিনিকের নামে। স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে অভিযোগ এলে অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ ইন্দুরকানী গ্রামের খলিলুর রহমানের মেয়ে মুন্নি আক্তার আট মাসের গর্ভবতী, তাই তার পরিবার চেকআপের জন্য তাকে নিয়ে আসেন ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু সিনিয়র নার্স শিবানী তাকে হাসপাতালে চেকআপ না করে পাশের মাতৃসেবা ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে সহকারী ডাক্তার পরিচয়ে ক্লিনিকের মালিক রাজিব রায় নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রাম করে রোগীকে নানাভাবে ভয় দেখিয়ে রোগীর স্বজনদের জানান, রোগীকে এখনই সিজার করতে হবে, নইলে মা ও শিশুর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। এমনকি রোগীর জন্য রক্তদাতাকেও রেডি করে রাখতে বলেন।

এ সময় রোগীর পরিবারের সদস্যরা সংশয়ে পড়ে যান। পরে রোগীর ভাই লিমন এসে তাদেরকে জানান, অন্যান্য ডাক্তাররা বলেছেন ডেলিভারির এখনও সময় আছে। কিসের সিজার করাবো? এই বলে তিনি বোনকে নিয়ে দ্রুত পিরোজপুর কেয়ার ফাস্ট ক্লিনিকে ডাক্তার আব্দুল মতিনের কাছে যান। তবে সেখানে অপারেশন না করায় দীর্ঘসময় বসিয়ে রেখে ক্ষুব্ধ হয়ে রোগীকে দেখতে অস্বীকার করেন। উল্লেখ্য, ডাক্তার মতিনই নিয়মিত এই মাতৃসেবা ক্লিনিকে এসে সিজার করান।

এক পর্যায়ে নিরুপায় হয়ে রোগীর পরিবার ওই রাতেই পিরোজপুর মুসলিম এইড হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে চিকিৎসকরা জানান, মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছেন এবং প্রসবের জন্য আরো প্রায় এক মাস সময় বাকি রয়েছে। এখন সিজার করালে শিশু ও মায়ের ঝুঁকি রয়েছে। পরেরদিন ২২আগস্ট শুক্রবার জেলা সদর হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফারজানা রহমানকে দেখালে তিনি একই কথা জানান।

রোগীর ভাই লিমন বলেন, ‘ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ভুয়া ডাক্তার দিয়ে মাতৃ সেবা নামে ক্লিনিক চালিয়ে সেবার নামে অযথা সিজারের ব্যবসা হচ্ছে। আমরা সচেতন ছিলাম বলে বড় ধরনের বিপদ থেকে বেঁচে গেছি। কিন্তু সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত এখান থেকে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।’

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, মাতৃসেবা ক্লিনিকের মালিক রাজিব রায় নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন এবং রোগী ভর্তি করান। এরপর ডাক্তার আব্দুল মতিনকে ডেকে এনে সিজার করান। আলাদাভাবে এনেস্থেসিয়া থাকার কথা থাকলেও ক্লিনিকে কোনো এনেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ নেই। এমনকি অতীতে এই ক্লিনিকে অপারেশনের পর একাধিক রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে, যা প্রভাবশালী নেতাদের তদবিরে ধামাচাপা দেয়া হয়।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু নার্স ও স্টাফও এই ক্লিনিকের দালালি করে থাকেন। তারা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে ক্লিনিকে নেন এবং প্রতিটি সিজারের বিপরীতে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পান।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মাতৃসেবা ক্লিনিকের মালিক রাজীব রায় বলেন, ‘আমি শুধু চেকআপ করেছি। পরে রোগীর স্বজনরা তাকে পিরোজপুরে নিয়ে গেছেন। আমি রোগীকে অপারেশন করার জন্য বলিনি।’

ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ননী গোপাল বলেন, ‘আমার হাসপাতালের কোনো স্টাফ যদি কোনো ক্লিনিকের দালালি করে তবে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ক্লিনিক মনিটরিংয়ের দায়িত্ব সিভিল সার্জনের। প্রয়োজন হলে আমি তাকে অবহিত করব।’

অন্যদিকে, ডাক্তার আব্দুল মতিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।

পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা চাই ক্লিনিকগুলো নিয়ম মেনে তাদের কার্যক্রম চালাক। যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, প্রয়োজনে সেইসব ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়া হবে।’

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *