রাত পেরোলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মূল দুই প্রার্থী হলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন, আর কমলা হ্যারিস বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট। তারা উভয়ই মার্কিন নাগরিকদের নজর কাড়তে বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তাদের প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সম্পর্কে কিছু সাধারণ ধারণা প্রচলিত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ডেমোক্র্যাটদের সাধারণত সরকারি ব্যয়ে উদার মনে করা হয়, যেখানে সম্পদের পুনর্বণ্টনের জন্য নীতি প্রণয়ন করা হয়। অপরদিকে, রিপাবলিকানরা ব্যবসাবান্ধব হিসেবে পরিচিত, যারা কর কমানোর মাধ্যমে ধনীদের জন্য সুযোগ তৈরি করেন। তবে, বাস্তবে দেখা যায়, গত শতকের দীর্ঘ সময় ধরে মার্কিন অর্থনীতি এবং শেয়ারবাজার ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্টদের শাসনামলে ভালো করেছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুবোস প্যাস্টর ও পিয়েত্রো ভেরনসি ১৯২৭ থেকে ২০১৫ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে, ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্টদের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪.৮৬%। অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের আমলে এটি ছিল মাত্র ১.৭%।
এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের ইকুইটি রিস্ক প্রিমিয়াম ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্টদের সময়ে রিপাবলিকানদের চেয়ে ১০.৯% বেশি ছিল, ১৯৯৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এটি ১৭.৪% পর্যন্ত বেড়ে যায়। এই রিস্ক প্রিমিয়াম দিয়ে সুদহারের প্রভাবকে আলাদা করা যায়।
এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, মার্কিন নাগরিকরা সবসময় ভালো সরকারের ওপর আস্থা রাখেন না। প্যাস্টর ও ভেরনসি বলছেন, অর্থনীতি যখন দুর্বল থাকে, তখন ভোটাররা ঝুঁকি নিতে চান না এবং তখন ডেমোক্র্যাটদের নীতিতে আস্থা রাখেন।
সাম্প্রতিক তিন নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকরা ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের নির্বাচিত করেছেন—১৯৯০-৯১ সালের মন্দার পর বিল ক্লিনটন, ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময়ে বারাক ওবামা, এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যে জো বাইডেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীদের নির্বাচনের পেছনে ভোটারদের ঝুঁকি পরিহার করার প্রবণতা কাজ করে।
তাহলে প্রশ্ন উঠছে, যদি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বিজয়ী হন, তাহলে কি শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে? সম্ভাবনা কম। কারণ ডেমোক্র্যাটদের জয় হলে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, যা ভোটারদের জন্য বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন আনবে না।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানদের বিজয় হলে নির্বাচনের দিনই মার্কিন শেয়ারবাজারের সূচক তিন শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। কারণ ইকুইটি তহবিলের ব্যবস্থাপকরা রিপাবলিকান সমর্থক, এবং তাদের পছন্দের প্রার্থী বিজয়ী হলে শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।
**বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব**
জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, এবারের নির্বাচনে কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হতে পারে। যদিও ট্রাম্পের বিজয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে, যা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের ‘রক্ষণশীল’ অর্থনৈতিক নীতি এবং ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতির ঘোষণায় বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে।
যদি ট্রাম্প নির্বাচিত হন, তবে তাঁর প্রশাসনের বাণিজ্য নীতির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। চীনের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে, এর প্রভাব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর ওপরও পড়বে।
এছাড়া, ট্রাম্পের মতে, সুদের হার নির্ধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকা উচিত। যদি তিনি ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন, তবে তা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিনিয়োগ অনেকাংশে ফেডের সুদহারের ওপর নির্ভরশীল।
এখন, মার্কিন অর্থনীতি স্থিতিশীল ও প্রবৃদ্ধি ভালো রয়েছে। অতীতে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীরা নির্বাচিত হওয়া সময়ের পরিস্থিতি বর্তমানে নেই। বর্তমান পরিস্থিতির কৃতিত্ব ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। ফলে, মার্কিন জনগণ আগের সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।