মোঃ বশির উল্লাহ বাশার, বেতাগী॥
বরগুনার বেতাগীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
৪ মাস আগে অর্থ বরাদ্দ হলেও এতদিন টিন বিতরণ না করেননি। হটাৎ সাপ্তাহিক ছুটির দিন গত শুক্রবার ভোর পৌনে ছয়টায় ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন বেতাগী উপজেলার সদ্য বদলী হওয়া ইউএনও মো. ফারুক আহমেদ।
তবে এতো ভোরে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি টিন নিতে আসতে পারেননি। বিতরণকৃত ঢেউ টিন সংখ্যায় কম দেওয়াসহ নিন্মমানের ঢেউ টিন দেওয়ার অভিযোগ একাধিক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির। অভিযোগের পর থেকে টিন বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।
জানা যায়, গত ২৬ মে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বেতাগী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬২১ পরিবারকে ১ বান্ডিল করে ঢেউ টিন ও নগদ ৫ হাজার টাকা অর্থ বিতরণের জন্য ২৭ জুন ২ কোটি ৬ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এতে পরিবহনসহ প্রতি বান্ডিল ঢেউ টিন বাবদ ৭ হাজার ৭ শত ৫০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বরাদ্দের পর ৪ মাসেও এই টিন ও টাকা বিতরণ করেননি ইউএনও ফারুক আহমেদ। গত ১২ অক্টোবর বাউফল উপজেলায় তার বদলীর আদেশ আসলে তিনি তড়িঘড়ি করে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের খবর দিয়ে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভোর পৌনে ছয়টায় ঢেউ টিন ও টাকা বিতরণ শুরু করেন। তবে টিন বিতরণ কার্যক্রমের খবর কোন সংবাদ কর্মী কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জানাননি ইউএনও।
গত শুক্রবার সরেজমিনে সকাল ৮টায় গিয়ে দেখা যায়, ইউএনও ফারুক আহমেদের নির্দেশে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ বিবিচিনি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে টিন ও নগদ টাকার চেক বিতরণ করছেন। তিনি টিন ও টাকা নিতে আসা ব্যক্তিদের স্বাক্ষর নিয়ে ও ছবি তুলে টিন বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা ভ্যানে করে টিন নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। তখন অনেকেই টিনের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় ওই ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকা থেকে টিন ও নগদ টাকা নিতে আসা আকবর আলীর সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
আকবর আলী বলেন, আমাকে রাতে হটাৎ ফোন দিয়ে ভোরে টিন নিতে আসতে বলেছে। আমি সকাল সকাল টিন নিতে চলে আসি। তবে ৯ পিছ টিন দেওয়ার কথা থাকলেও স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে ৮ পিছ টিন দেওয়া হয়েছে। যে টিনগুলো পেয়েছি তা নিম্মমানের। কয়েকদিন পর নষ্ট হয়ে যাবে।
একই এলাকার নুরজাহান বেগম বলেন, আমি খুব সকালে টিন নিতে এসেছি। আমি ৮ পিছ টিন ও ৫ হাজার টাকার চেক পেয়েছি। টিনের মানও খারাপ।
রুমি বেগম নামে আরেকজন বলেন, আমাকে গতকাল ফোন দিয়ে ভোর ৬ টায় টিন নিতে আসতে বলেছে। যে টিন পেয়েছি তা দেখলেই বোঝা যায় তেমন ভালো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেতাগী উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, আমি ফজরের নামাজ আদায় করে বাসায় যাওয়ার পথে দেখি খুব ভোরে টিন বিতরণ করা হচ্ছে। যে টিনগুলো দেওয়া হচ্ছিলো সেগুলোও ছিল নিন্মমানের। এত ভোরে টিন বিতরণ করার কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন ইউএনও স্যারের নির্দেশেই টিন বিতরণ করা হচ্ছে। যাদের টিন দেওয়া হচ্ছে তাঁদের অনেকেই স্বচ্ছল।
টিন বিতরণ কার্যক্রমের বিবিচিনি ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ফজর নামাজের পর থেকে বিবিচিনি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ শুরু করি। আমাদের একটু তাড়া আছে তাই ফজরের নামাজের পর থেকে বিতরণ শুরু করতে হয়েছে।
টিন পরিমানে কম দেওয়ার বিষয়ে ইউএনও ফারুক আহমেদকে জানালে তিনি এসে উপস্থিত অভিযোগকারীদের বাড়তি টিনের ব্যবস্থা করে দেন। এ সময় তিনি বলেন, টিন পরিমানে কম দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে টিনের মান বুঝতে হলে যারা টিন সম্পর্কে ভালো বুঝে তাঁদের নিয়ে আসেন।