শফিকুল ইসলাম মাসুদ, পিরোজপুর প্রতিনিধি ॥
নদীবেষ্টিত জেলা পিরোজপুর। এক সময় জেলার অভ্যন্তরে অসংখ্য নদীনালা ও জেলার চারপাশে কচা, কালিগঙ্গা ও বলেশ্বরের মতো বড় বড় নদী থাকায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলায় যাওয়ার মাধ্যম ছিল ফেরি। তবে সম্প্রতি এসব নদীতে বেশ কয়েকটি সেতু হওয়ায় যাতায়াতের জন্য ফেরি চাহিদা হারিয়েছে। ফলে অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে পিরোজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে ফেরি বিভাগের কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
নিরাপত্তার অভাবে রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রাংশ। রোদ-বৃষ্টি, ধুলা, কাঁদার আস্তরণে বোঝার উপায় নেই কোনটা সচল আর কোনটা অচল। স্থানান্তর না হওয়া ও তদারকির অভাবে খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে এসব সম্পদ।
দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণা না থাকা ও ফেরিগুলো চলাচল না করায় পল্টুনের পুরো এলাকা আগাছায় ছেয়ে গেছে। এ অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা কোটি টাকার মূল্যবান এসব নৌযান যেন খেয়ে ফেলছে মাটি, পানি ও কাঁদা।
সড়ক ও জনপদ সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর জেলার অভ্যন্তরীণ ও দেশের অন্যান্য জেলাগুলোতে সড়ক যোগাযোগের জন্য বিগত বছরগুলোতে জেলার ১১টি স্থানে গড়ে ওঠে ফেরি সার্ভিস। যার মধ্যে পিরোজপুর বরিশাল সড়কের বেকুটিয়া, পিরোজপুর মঠবাড়িয়া সড়কের কচা নদী ও পিরোজপুর খুলনা মহাসড়কের বলেশ্বর নদীর ফেরি অন্যতম ছিল। বর্তমানে পিরোজপুর সদর উপজেলার বলেশ্বর, ইন্দুরকানি ও কচা নদীর বেকুটিয়া পয়েন্টে এবং নাজিরপুরে বৈঠাকাঠা সড়কের দীর্ঘা ও কালিগঙ্গা নদীতে সেতু হওয়ায় ওই সব স্থানের ফেরি ও পন্টুনগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। জেলায় মোট ১২টি ফেরি ও পন্টুন অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। যার বেশিরভাগ মালামাল ইতোমধ্যে চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া এসব ফেরি ও পন্টুনগুলো পতিত অবস্থায় থাকায় দিনে দিনে নষ্ট হয়ে অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামের কাইউম শেখ বলেন, বেকুটিয়া ফেরিঘাটে অচল পড়ে থেকে কয়েকটি ফেরি নষ্ট হচ্ছে এবং রাতের আঁধারে এর যন্ত্রপাতি, লোহা, রড চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সরকারি এসব সম্পত্তি রক্ষার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
পিরোজপুর সদর উপজেলার হুলারহাট-দেওনাখালি খেয়াঘাট এলাকায় বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমরা দেওনাখালি খেয়াঘাট এলাকা থেকে হুলারহাট হয়ে জেলা শহরের সাথে প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করি। কিন্তু এই খেয়াঘাট থেকে আসা-যাওয়া করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমাদের এখানে একটি ফেরির ব্যবস্থা করা হলে আমরা যানবাহন নিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে কাউখালী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের মানুষ চলাফেরা করতে পারতাম।
এ বিষয়ে পিরোজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ বলেন, পিরোজপুর সড়ক বিভাগের অধীনে ছয়টি ফেরিঘাট পরিচালিত হয়। এই ছয়টি ঘাটে চলমান ফেরির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি অতিরিক্ত ফেরি রাখা থাকে যাতে চলমান ফেরিতে কোনো ত্রুটি ঘটলে এগুলো ব্যবহার করা হয়। ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বরিশাল সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ফেরি বিভাগ থেকে তার দেখভাল করা হয়। এছাড়া ব্যবহার অনুপযোগী ফেরিগুলো সরকারি বিধান মেনে নিলামের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করেছি। আশাকরি খুব দ্রুত সময়ে এ বিষয়ে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।