আহমেদ বেলাল।।
মরি মরি করেও যেন মরছেন না! সবাইকে জ্বালিয়ে মারবেন বলেই হয়তো বেঁচে রয়েছেন। মৃত্যু যে আসন্ন তা তিনি বুঝে গিয়েছেন। বিভৎস মৃত্যুর ছায়া যেন তাকে ঘিরে ধরেছে; কিন্তু তিনি প্রাণপণ টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। জরাজীর্ণ একখানা কুঠুরি ভেতরে, শ্রান্ত-ক্লান্ত দেহখানি কোনমতে বয়ে চলেছেন আর ভাবছেন, হয়তো এ যাত্রায় টিকেও যাবেন। কল্পনার জগৎ হাতরে খুঁজে ফিরছেন তার অতীতকে। কত সুন্দর ছিলো তার শৈশবের দিনগুলি! সেই বকুল তলায় ফুল কুড়ানো মেয়েটির কথা আজও মনে গেঁথে আছে। রোজ বিকেলে সে আসতো। ফুল কুড়ানোর ছলে দেখা হত দু’জনার;মাঝে মাঝে চোখাচোখিও হত। ভীষণ লজ্জা পেয়ে;মৃদুস্বরে নিজেকে ভৎসনা করতে করতে ফিরে যাওয়া সেই কিশোরী মেয়েটির মুখচ্ছবি এখনও যেন জীবন্ত, অমলিন!
অবারিত সবুজ মাঠের আল ধরে ছোটাছুটি করা কৈশোরের কথা ভীষণ মনে পড়ে যাচ্ছে আজ। বাবার শাসন আর মায়ের আদর যেন কল্পনার হাত ধরে আসছে মাখামাখি করে! দূরন্তপনার মহা-সমুদ্র সাঁতরে যারা বড় হয়েছেন কেবল তারা-ই বুঝবেন দস্যিপনার অপার আনন্দ কেমন হতে পারে। হঠাৎ-ই চাপা উঁহু শব্দে পাশ ফিরলেন। শরীরের ডান পাশটাকে মনে হচ্ছে অসাড়-অচল; যেন কোনমতে শরীরের অন্য অংশগুলো সাথে জুড়ে রয়েছে- নিতান্তই অনিচ্ছাকৃতভাবে! মৃত্যুর নিকষ কালো ছায়াটাকে পাশ কাটিয়ে তিনি আবারো স্মৃতিমন্থর করতে লাগলেন। এই তো সেদিনের কথা! কত সুন্দর একটি সংসার ছিলো তার। ভাবতেই মনটা আলোড়িত হচ্ছে।
অল্প বয়সেই বিয়ে; ঘর-সংসার নিয়ে কত কাজ করতে হয়েছিলো তাকে। নতুন ঘর,সে ঘরে নতুন ঘরণী এলো,তার কোল আলো করে এলো- একে একে চার সন্তান। চোখের সামনে সন্তানদের বেড়ে ওঠা,পুতুলের মত সুন্দর বউয়েরও বয়স বেড়ে যাওয়া; যেন কল্পনার রাজ্যের এক কল্প কথা! জীবনের এই পরন্ত বেলায় এসে- যেন সবকিছুকেই অলীক আর কল্পনা মনে হচ্ছে।
বয়সে বউয়ের চেয়ে দশ বছরের বড় হয়েও তিনি দিব্যি বেঁচে রয়েছেন,অথচ যাকে ঘিরে তার সুন্দর একটি কল্পনার রাজ্য ছিলো, যাকে ঘিরে সাজানো সোনার একটি সংসার ছিলো, সেই সোনায় মোড়ানো মুখটি বহু আগেই তাকে ত্যাগ করে-অজানায় পাড়ি জমিয়েছে। সে মুখটি যেন আজও শীতল জলের ঝাপটার মত ক্ষণে ক্ষণে উপস্থিত হয়ে তার হৃদয়কে শীতল করার চেষ্টা করে।
আবারো চাপা একটি আর্তনাদ ওঠে, তবে সে শব্দ ঠোঁটের আশপাশটা ভেদ করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। যেন, বিকট শব্দকে হঠাৎ থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পায়ের আঙুলগুলো কাপছে! শরীরটা যেন হঠাৎ-ই শীতল হয়ে যাচ্ছে,শরীরের ডান পাশটা অসাড়-অচল হলেও- ক্ষণিকের জন্য যেন দুলে উঠছে!

চোখের পাতা যেন পিটপিট করছে অবিরত, হৃৎস্পন্দন বাড়ছে। কেমন যেন- গোঙানির মত শব্দ হচ্ছে। আচমকা একটি দীর্ঘশ্বাস নাতিদীর্ঘ হয়ে বের হয়ে গেলো। সে দীর্ঘশ্বাসে জড়িয়ে ছিলো যেন, কত গল্প; কত কথা, কত হাসি-কান্নার ছবি! শান্ত শীতল দেহখানি যেন বিছানার সাথে জড়াজড়ি করে মিশে আছে। মুখ জুড়ে মৃত্যুর ছায়া স্পষ্ট; যেন কিছু গল্প বলা এখনও বাকি,সে গল্প আর বলা হয়ে উঠলো না। শরীরের ডান পাশটার মত-বাম পাশটাও যেন স্থির,অচল, অসাড় হয়ে পড়ে আছে বিছানায়,গল্পের টানে-তার গল্প আর ফুল হয়ে ফুটলো না।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।