নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামি সুজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে। নিহত সুজনের পরিবার দাবি করেছেন, ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় সালিশির জন্য দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় স্থানীয় বাচ্চু নামে এক ব্যক্তি সহযোগীদের নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে সুজনকে।
শনিবার রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসব কথা জানান নিহতের মা ও বাবা। নিহতের বাবা মনির হোসেন বলেন, শুক্রবার পাশের ঘরের লোকজন অভিযোগ আনেন আমার ছেলে চার বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা চালিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। পরিবার থেকে ওইদিন কোনো অভিযোগ থানায় দেয়নি। শনিবার দুপুরে থানায় মামলা করে। তবে শুক্রবার রাতে এলাকার দোকানদার বাচ্চু ৫০ হাজার টাকা চায়। বলে ধর্ষণচেষ্টার যে ঘটনা ঘটেছে তা সালিশি করে দেবে। আমার কাছে অত টাকা ছিল না। বলেছি, টাকা দিতে পারবো না। তখন বাচ্চু বলে গেছে, সুজনের সিকিউরিটি তারা দিতে পারবে না। নিহতের মা মঞ্জু বেগম বলেন, ‘শনিবার দুপুর ২টার দিকে দোকানদার বাচ্চু আইসা কয় “২০ হাজার টাকা দিবা, তাইলে তোমার পোলা বাইচ্যা থাকবে, কেসমেস ডিসমিস হইয়া যাইবে। শালিসের খরচ।” আমি কইছি, মুই টাকা পামু কই। বাচ্চু কয়, “তুমিইতো পোলা লাই (প্রশ্রয়) দাও।” এরপর বিকেল ৪টার দিকে আমার পোলাডারে ধইরা নিয়া গেছে, পরে তারা পিটাইয়া মাইরা ফালাইছে।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ক্যাডার বাচ্চু, বাচ্চুর ছেলে, বাচ্চুর ভাইয়ের ছেলে, আইউব মুন্সী, সাদ্দাম, মানিকের ছেলে, লিমন, কাইউমসহ আরও অনেকে সুজনকে গাছের লগে বাইন্ধা পিটাইয়া মারছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার পোলায় অন্যায় করলে থানা-পুলিশ ছিল। তোরা আমার পোলাডারে পিটাইয়া মাইররা ফালাইলি কেন?’ নিহতের বড় ভাই রুবেল হাওলাদার বলেন, ‘যারা সুজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে তারা ওরে মারে নাই। মাঝখানের লোকজন মারছে।
ওরে টার্গেট অনেক আগেই করছিল। সুজন এলাকার খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে নেশা বিক্রি করতো। আমরা অনেক কষ্টে সেই পথ দিয়ে ফিরিয়েছি। তবে এলাকার সেই খারাপ লোকগুলো ওরে হুমকি দিত আবার বিক্রি না করলে মেরে ফেলবে। প্রতিবেশী একজন থানায় মামলা দিয়েছে সুযোগ পেয়ে তারা আমার ভাইকে ধরে নিয়ে চরে বেঁধে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।’
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত স্টাফরা জানিয়েছেন, নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন সুজনের শরীরে স্পষ্ট। এ ছাড়া পিটিয়ে ও লাথি দিয়ে সুজনের অণ্ডকোশ থেতলে দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপুলিশ পরিদর্শক মিরাজ বলেন, আমরা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক সুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। মূলত মব সৃষ্টি করে স্থানীয় লোকজন সুজনকে গণপিটুনি দিয়েছে। তবে থানায় কেউ মামলা দিলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উল্লেখ্য, বরিশাল নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডের ধান গবেষণা সড়কের বাসিন্দা ইজিবাইক চালক মনির হোসেনের ছেলে সুজন হাওলাদারের বিরুদ্ধে শনিবার দুপুরে চার বছরের প্রতিবেশী শিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। বিকেলে তাকে ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় লোকজন। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।