শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

বরিশাল ১০ আর্মড ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ব্যক্তিগত উদ্যোগ ব্যতিক্রমী নার্সারি

খালিদ সাইফুল্লাহ, বরিশালের কীর্তনখোলার তীরে (৩০ গোডাউন এলাকায় এপিবিএনের ব্যতিক্রম উদ্যোগে গড়ে উঠেছে ফুল, ফলজ ও বনজের সমরোহ। প্রশাসনের ব্যস্ততা আর রুটিন দায়িত্বের ফাঁকে, কেউ যখন প্রকৃতির বন্ধুত্বে নিজেকে নিবেদন করেনÑতখন সেটাই হয়ে ওঠে অনন্য দৃষ্টান্ত। বরিশাল ১০ আর্মড ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অবস্থিত এপিবিএনের নার্সারিটিএমনই এক উদাহরণ, যেখানে সবুজের ছায়ায় ফুটে উঠেছে স্বেচ্ছাশ্রম, নিষ্ঠা আর সৌন্দর্যের মেলবন্ধন।

প্রশাসনিক ভবনের পাশেই কীর্তনখোলা নদীর তীরে বিস্তৃত এই নার্সারির
মূল উদ্যোক্তা এপিবিএন-এর কমান্ডিং অফিসার (এডিশনাল ডিআইজি)
আবু আহাম্মদ আল মামুন। তাঁর নেতৃত্বে এবং ফোর্সের স্বতঃস্ফূর্ত
অংশগ্রহণে ২০২৪ সালে (১৭ মে) গড়ে উঠেছে এই সবুজ আবাস।
‘সরকারি চাকরিতে রুটিন ওয়ার্কের বাইরে ইচ্ছা থাকলেই গঠনমূলক
কিছু করা সম্ভব,’ বলেন ডিআইজি মামুন। ‘অনেক জায়গা ফাঁকা পড়ে
থাকে। ভাবলাম, সেগুলোতেই যদি ফলের গাছ লাগানো যায়? কিন্তু তখন তো
দেখা গেল অনেক চারা গাছ লাগবে। সেখান থেকেই নার্সারি গড়ার
পরিকল্পনা। বর্তমানে এখানে প্রায় এক হাজার বেশি ফলজসহÑসব মিলিয়ে
এখানে প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক চারা গাছ রয়েছে।’

কেবল গাছ লাগানোতেই থেমে নেই তাদের পরিকল্পনা। পুরো এপিবিএন
এলাকা জুড়েই লাগানো হয়েছে বিভিন্ন জাতের আম, লিচু, পেয়ারা, আতা
সহ নানা ফলের গাছ। নার্সারির মূল অংশটি তৈরি হয়েছে প্রায় এক একর
জায়গা জুড়ে। বিগত দিনে এই জায়গাটি ছিলো অবহেলীত ও জঙ্গলে ঘেরা।
বর্তমানে এই নার্সারিকে ঘিরে শুধু প্রকৃতির সঙ্গে নয়, ফোর্সদের
মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও গড়ে উঠেছে এক নিবিড় সম্পর্ক। এসআই
আব্দুল আলিম বলেন, ‘সরকারি কাজের ফাঁকে আমরা যখন সময় পাই, তখন
নার্সারির পিছনে সময় দিই। এর মধ্যেই আমরা আনন্দ খুঁজে পাই। সবচেয়ে
ভালো লাগেÑএই নার্সারিটি কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে। আর এই
নার্সারিটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন আমাদের স্যার। এখন

প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী বেড়াতে এসে নার্সারি ঘুরে তাদের মধ্যে
অনেকে এসময় ফলজ ও ফুলের চাড়াও ক্রয় করেন।’
‘প্রতিমাসে কখনো ৩০ হাজার, কখনো ৩৯ হাজার, আবার কখনো ১
হাজারÑভিন্ন ভিন্ন আয় হয়,’ জানান একজন ফোর্স সদস্য। ‘এই আয়ের
টাকা থেকে আমরা ফোর্সদের চিকিৎসা সহ বিভিন্ন কাজে ব্যয় করি।
যেহেতু আমরা নিজেরাই পরিচর্যা করি, খরচ কম হয় এবং গাছের দামও থাকে
হাতের নাগালে।’
নগরের সাধারণ নার্সারিগুলোর তুলনায় এখানে চারার দাম কম। মাত্র ২০০ থেকে
শুরু করে ৪০০০ টাকার মধ্যে চারাগাছ মিলছে। এতে ক্রেতারা যেমন উপকৃত
হচ্ছেন, তেমনি এপিবিএন ফোর্সও নিজেদের উন্নয়নমূলক কাজে অর্থ
ব্যবহার করতে পারছেন।

এডিশনাল ডিআইজি মামুন বলেন, ‘আমি এমনভাবে গাছ তৈরি করছি,
যাতে এখান থেকে কেউ ফল গাছ কিনলে সে যেন নিশ্চিত থাকে। এই বছরই
তারা ফল পাবেÑএটাই আমার লক্ষ্য।’
‘বৃক্ষ পরিবেশ বাঁচায়। আমরা চেষ্টা করছি সব ফল-ফলের জাত সংরক্ষণ করতে।
পরিবেশ দিবসে বিশেষ ছাড়ও থাকবে নার্সারির চারার ওপর,’ বলেন মামুন।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশপ্রেমীরা শুধু নিজেরা গাছ লাগালেই হবে না,
অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। গাছ থাকলে পরিবেশ থাকবে, প্রকৃতি থাকবে,
মানুষও ভালো থাকবে।’
এই নার্সারিতে কাজের জন্য কাউকে বাধ্য করা হয় না। ‘আমি নিজেই
নার্সারিতে কাজ করি। আমাদের ফোর্সরাও অবসর সময়টুকু এখানে কাজে
লাগায়। এই কাজ তাদের আনন্দ দেয়, মানসিক শান্তি দেয়,’ বলেন মামুন।
বরিশালের এই এপিবিএন নার্সারিটি যেন শুধু গাছের চারা নয়, রোপণ
করছে এক নতুন মূল্যবোধÑযেখানে শৃঙ্খলা আর প্রকৃতিপ্রেম একসূত্রে
বাঁধা। যারা চাকরিকে কেবল অফিসের চার দেয়ালের মধ্যে দেখেন, তাদের জন্য
এই নার্সারি হতে পারে এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন সচেতন মহল।
পরিবেশবিদ ও সংগঠক শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘একসময় আমরা আকাশমনি,
মেহগনি সহ বিভিন্ন ধরেন গাছ আমরা রোপন করেছি যে গুলো মোটেও
পরিবেশ বান্ধব না। কিন্তু ১০ আর্ম ব্যাটিলয়েন যে উদ্যোগ গ্রহন করেছে

সেখান থেকে পুষ্টির চাহিদা পূরন এবং ভবিষৎ-এ উদ্যোগ দিয়ে বৈদেশি
অর্থও উপর্যান করা সম্ভব হবে।’ তাই এমন পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলো যদিও
ছোট পরিসরে শুরু হয়, তবুও সেগুলো সেনা ক্যাম্প, পুলিশ লাইন্স, বিভাগীয়
কমিশনারের কার্যালয়সহ প্রতিটি সরকারি দপ্তরে গ্রহণ করা উচিত বলে মনে
করেন তিনি।’

আরো পড়ুন

‎গৌরনদীতে অজ্ঞাত পরিবহনের ধাক্কায় নিহত-১

সোলায়মান তুহিন গৌরনদী প্রতিনিধি।। ‎বরিশাল–ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার সাউদের খালপার এলাকায় দ্রুতগামী অজ্ঞাত পরিবহনের ধাক্কায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *