নিজস্ব প্রতিবেদক।।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) নাজমুল আহসান কলিমউল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭আগস্ট) সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে ১৮জুন বেরোবি উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কলিমউল্লাহসহ ৫জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বেরোবির চতুর্থ উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের ১৪জুন যোগদান করার পর ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিত থেকে ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে ব্যাপকভাবে অ্যাকাডেমিক, প্রশাসনিক, ও আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতি, ভর্তি বাণিজ্য, হয়রানি, নির্যাতন, নিপীড়ন আর স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপাচার্য এসব দুর্নীতি করেন সংঘবদ্ধভাবে। তবে তিনি এসবের মূল নায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করেছিলেন ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
নিয়োগ দুর্নীতিঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সংস্থা জানিপপ এবং কিছু কিছু অঞ্চলের প্রার্থীরা প্রাধান্য পেয়ে থাকেন। এছাড়া নিয়োগ বাণিজ্যেরও অভিযোগ আছে।
আর্থিক দুর্নীতিঃ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ ক্রয় ক্ষেত্রেই সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ না করে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছিলেন। উপাচার্যের দুর্নীতি সহযোগী শিক্ষক, কর্মকর্তারাও গত সাড়ে তিন বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছিল।প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ব্যাপক দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছিল।
অ্যাকাডেমিক দুর্নীতিঃ উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ একাডেমিক দুর্নীতিও করেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও পরিচালকসহ একাই ১৬টি প্রশাসনিক পদে থেকে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছিলেন। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর ২৬ (৫) ধারা লঙ্ঘন করে ছয়টি অনুষদের মধ্যে চারটি অনুষদের ডিন দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সমালোচনার মুখে তিনটি অনুষদের ডীন পদ ছেড়ে দিলেও যোগ্য অধ্যাপক থাকা সত্ত্বেও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন পদ আঁকড়ে ধরে ছিলেন।
বরখাস্ত, সতর্ক, আদালত অবমাননাঃ দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললে ড. কলিমউল্লাহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দমন করার জন্য কোনো তদন্ত ছাড়াই সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে অবৈধভাবে শোকজ নোটিশ দেন, সতর্ক করেন। উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে এ পর্যন্ত ১৪জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রেখেছেন। ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ন্যায় বিচার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত থেকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তাও তিনি অমান্য করেন। শিক্ষকদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সতর্ক করেন তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে।
‘দুর্নীতির আখড়া’ ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসঃ আইন লঙ্ঘন করে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ’আফরোজা গার্ডেন’ (২য় তলা), ২৫/১৩ ব্লক-বি, খিলজি রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ ঠিকানায় ২০১৭ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি লিয়াজোঁ অফিস চালু করেছিলেন কলিমুল্লাহ । জরুরি কার্যাদি সম্পন্ন করার নামে স্থাপিত ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অফিসে পরিণত করেছিলেন। লিয়াজোঁ অফিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যপ্রণালি সম্পন্ন করার নামে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, ভুয়া বিলে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছিল।
উপস্থিত মাত্র ২৩৭ দিন তা আবার এক বা দুই ঘণ্টার জন্য ! ড. কলিমউল্লাহ’র উপস্থিতি-অনুপস্থিতির হিসাব করে অধিকার সুরক্ষা পরিষদ দেখেছিল যে ১৪জুন ২০১৭ উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে ২৮ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত মোট ১৩৫২ দিনের মধ্যে ১১১৫ দিনই তিনি ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেছেন। অর্থাৎ উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৩৭ দিন। কখনোই তিনি পূর্ণদিন উপস্থিত ছিলেন না, কখনো ক্যাম্পাসে ছিলেন এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টার জন্য।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।