নিজস্ব প্রতিবেদক।।
স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে তিন দফা দাবি আদায়ে ২৪ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হলেও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল পরিদর্শনে না আসায় লাগাতার ‘বরিশাল ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে ছাত্র-জনতা।
সোমবার (১১আগস্ট) বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল-সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সাড়ে ৪ঘণ্টা অবরোধ শেষে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন সংগঠক মহিউদ্দিন রনি।
এদিকে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে তিন মাস সময় চেয়েছেন।
এর আগে রোববার বিকেলে সাড়ে ৫ঘণ্টা একই মহাসড়ক অবরোধ শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ২৪ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় ছাত্র-জনতা। আল্টিমেটামে বলা হয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে এসে তদন্ত শেষে সংস্কারের সুস্পষ্ট আশ্বাস প্রদানের দাবি জানানো হয়।
সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনি বলেন, সারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে অব্যবস্থাপনা, রোগীদের হয়রানি ও স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভাঙার দাবিতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। তারপর সবশেষ রোববার ২৪ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলাম বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে স্ব-শরীরে আসার জন্য। এসে অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত শেষে তিন দফা দাবির স্বপক্ষে সুস্পষ্ট আশ্বাস প্রদানের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আল্টিমেটামের সময় শেষ হলেও তিনি বরিশাল আসেননি, তাই দাবি আদায়ে আমরা বরিশাল ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।
মহিউদ্দিন আরও বলেন, বরিশালবাসীর আর্তনাদ এখনো মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক এখনো নড়েনি। যদি শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ওপর দুর্নীতি, ভোগান্তি, অবহেলা চলতে থাকে, তাহলে এই আন্দোলন আরও কঠোর হবে।
এর আগে, স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশালের ছাত্র-জনতা। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা হয়।
এতে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। কুয়াকাটা থেকে আসা যানবাহনগুলো নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোডের চৌমাথা থেকে নবগ্রাম রোড দিয়ে কাশিপুর চৌমাথার দিকে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। এতে যানবাহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে না থেকে বিকল্প পথে মহাসড়কে যুক্ত হয়ে গন্তব্যে চলে যায়। একই পথে ঢাকা থেকে কুয়াকাটাগামী গাড়িগুলোও এই রুটে গন্তব্যে চলে যায়। এই পথে অতিরিক্ত ১০কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে হলেও যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়নি। তবে অতিরিক্ত সময় ক্ষেপণসহ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে। এদিকে অবরোধ চলাকালে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে আন্দোলনকারীরা ইমার্জেন্সি লেন তৈরি করে। ঘটনাস্থলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আমার মূল কাজ হলো হাসপাতালের সেবার মান বাড়ানো, রোগীকে সন্তুষ্ট করা, হাসপাতালটি আমাদের সবার, এই হাসপাতাল চালাতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার চলমান আন্দোলন নিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য সহকারী উপদেষ্টা, সচিব ও ডিজি স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বরিশালের বিষয়ে অত্যন্ত পজিটিভ।
বরিশালসহ সারা দেশে স্বাস্থ্য সংস্কার বিষয়ে কাজ করছেন তারা। তাদের সময় দিতে হবে। তবে অচিরেই সারা দেশে ৩হাজার চিকিৎসক ও আগামী মাসে ৩২শত নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের হাসপাতালে তুলনামূলক বেশি চিকিৎসক ও নার্স পাবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। একই সঙ্গে খুবই দ্রুত আমাদের হাসপাতালের জন্য ১টি এমআরআই মেশিন, ক্যাথ ল্যাব ও সি-আর্ম মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। এজন্য তিনি বরিশালবাসীর কাছে তিন মাসের সময় প্রত্যাশা করেন।
বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন সিকদার বলেন, তিন দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আজও মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
গত ১৬দিন ধরে তিন দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে ছাত্রজনতা। এই দাবিতে রোববার সাড়ে ৫ঘণ্টা, শনিবার ছাত্র-জনতা ও বাসশ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থানে গেলে ছাত্র-জনতা আড়াই ঘণ্টা ও বাসশ্রমিকরা দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে। এ ছাড়া শুক্রবার সাত ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার আড়াই ঘণ্টা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।