আরিফ আহমেদ বিশেষ প্রতিবেদক
বরিশাল সিটি করপোরেশন (বসিক) টাউন প্লানার বা নগর পরিকল্পনাবিদ বলে কোনো পদ না থাকলে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিগত পঞ্চম পরিষদের মেয়র ও পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এর সময়ে কোনোরকমে বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
আবার তারও পূর্ব মেয়াদের (চতুর্থ পরিষদের) চিহ্নিত ও বিতর্কিত লোকরাও এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন এবং বিভিন্ন সময় বসিকের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করছে। খাল পুনরুদ্ধার, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার কিম্বা প্লান পাস নিয়ে এরা গড়িমসি করে প্রশাসককে বিব্রত ও বিতর্কিত করছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
যার প্রমাণ পাওয়া গেছে, জিলা স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে ভাটার খাল পুনরুদ্ধারে। এখানে খালের জমিতে বহুতল ভবন, বস্তিঘর থাকার পরও তা এড়িয়ে গেছেন শাকিল ও স্বপন কুমার দাসসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। আবার ব্রাউন কম্পাউন্ড থেকে গোরাচাঁদ দাস লেনের অনেক বাড়িঘর ইচ্ছেকৃত ভাবে ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। ভাটার খালের ভবন মালিকরা ছাড় পেলে, গোরাচাঁদ দাস লেনের ভবন মালিকরা কেন ছাড় পেল না এ প্রশ্ন নিয়ে বিব্রত সয়ং সিটি করপোরেশনের প্রশাসক রায়হান কাওছারও।
এদিকে নগরীর ভবন নির্মাণের গ্লান পাস নিয়েও চলছে গড়িমসি। চীফ প্লানার অফিসারকে সরিয়ে সেখানে খোকন সেরনিয়াবাত এর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে নগর প্লানার হয়েছেন সৈয়দা তাবাচ্ছুম ইসলাম। তার দায়িত্বশীলতা নিয়েও অভিযোগ করেছেন অনেক জমি মালিক। তারা বলছেন, প্রায় এক হাজার জমি ব্যবহার সার্টিফিকেট আটকে আছে তার টেবিলে। নগরীর পরিবেশ নিয়ে গত একবছরে তার কোনো ভূমিকা চোখে পরেনি।
যদিও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের জন্য টাউন প্লানার বলে কোনো পদ আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের সুপারিশে খোকন সেরনিয়াবাত তাবাচ্ছুম ইসলামকে টাউন প্লানার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। টাউন প্লানার ষষ্ঠ থেকে নবম গ্রেডের একটি সরকারি পদ। সাধারণত শহর ও নগর অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনা, নকশা প্রণয়ন, এবং ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত থাকেন তারা। তাদের কাজের মধ্যে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং জনসাধারণের জন্য বাসযোগ্য স্থান তৈরি অন্তর্ভুক্ত। বরিশালের জন্য এজাতীয় পদ সৃষ্টির চেষ্টা চলমান রয়েছে। তাই মৌখিক ভাবে কোনোরকম গ্রেডভুক্তি ছাড়াই তাবাচ্ছুম ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তাবাচ্ছুম ইসলাম এই দায়িত্বে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। বলেন, বরিশাল শহরেই আমার বেড়ে ওঠা ও পড়াশুনা। তাই পড়াশুনা শেষ করে বরিশালেই থাকতে চেয়েছি। কারণ এই শহরটাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। এই শহর সাজানোর সুযোগ চেয়েছিলাম। তবে এখনো পরিপূর্ণ দায়িত্ব পাইনি বলে কাজের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত কতগুলো ল্যান্ড ইউজার সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে এবং কতগুলো আবেদন জমা রয়েছে সে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, এজন্য জনসংযোগ কর্মকর্তাই তথ্য দেবেন। অথবা সিইও রেজাউল বারী থেকে অনুমতি প্রয়োজন হবে।
জানা যায়, সৈয়দা তাবাচ্ছুম ইসলাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করে চাকুরির প্রয়োজনে তৎকালীন মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত এর দারস্থ হন। তিনি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম লাবুর মেয়ে। জানুয়ারি ২০২৪ থেকে তিনি এই দায়িত্বে আছেন। তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং বর্তমান বসিক প্রশাসক রায়হান কাওছার এর মৌখিক নির্দেশে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।
৩৬ জুলাই পটপরিবর্তনের পর থেকে বর্তমান প্রশাসন এসব রাজনৈতিক নিয়োগ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। সম্প্রতি তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও বর্তমান প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে তাকে এখনো বহাল রেখেছেন এবং তার মেয়াদ আরো বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি টাউন প্লানার পদও সৃষ্টির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বসিক প্রশাসনের সিইও রেজাউল বারী।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী আরো বলেন, বিতর্কিত যারা তারা নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টাউন প্লানার পদটি খুবই জরুরি প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আবেদনও করা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত অনুমোদন আসেনি। নগরীর প্লানিং বিষয়ে যোগ্য ও দক্ষ লোকবল নিয়োগে আমরা সচেতন বলে জানান তিনি।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।