আহমেদ বায়েজীদ।।
এক.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ- ডাকসু নির্বাচনটা স্পষ্টতই ছিলো ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে-যেটা আমরা জুলাই থেকে পেয়েছি; কিন্তু ছাত্রদল সেই টোনটা ধরতে পারেনি। তারা উল্টো ভারতের শেখানো বুলি দিয়ে ক্যাম্পেইন করেছে। ভারত যেমন পছন্দ করে- তাদের পুরো ক্যাম্পেইনটাই ছিলো তেমন। শেষ মুহূর্তে এসে তারা সাদা পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে উদিচী-ছায়ানট স্টাইলে শপথ অনুষ্ঠান করেছে, এসব জেন জিদের বর্তমান সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের সাথে যায় না।
দুই.
ছাত্রদলের প্রার্থী বাছাই চমৎকার ছিলো; কিন্তু এই ছেলেদের কোন প্রস্তুতি ছাড়াই মাঠে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শিবিরের প্রার্থীরা যেমন এক বছর ধরে টক শো, সভা, সেমিনার করেছে। আবিদ-হামিমরা কিছুই করতে পারেনি। তাদের সাক্ষাৎকার বা মিডিয়া ব্রিফিংগুলো ছিলো গৎবাধা কথামালা। অথচ এদের পলিটিক্যাল গ্রুমিং দরকার ছিলো।
তিন.
লন্ডন থেকে প্যানেল নির্ধারণের বিষয়টি চরম নেতিবাচক ছিলো। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার বিষয়ে যখন এত কথা চলছে, তেমন একটি সময়ে এটি ছিলো ছাত্রদলের জন্য বড় কৌশলগত ভুল। পুরো প্যানেলে টপ থ্রি ছাড়া আর কারো ব্যক্তিগত পরিচিতি ছিলো বলে মনে হয় না। বিশেষযোগ্যতা সম্পন্নরাও ছিলো না। শিবিরে যেমন ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট ছিলো, গোল্ড মেডালিস্ট ছিলো, ব্ল্যাকবেল্টধারী ছিলো।
চার.
ছাত্রদলের প্রার্থীরা বারবার বলেছে, শিবিরকে ভোট দেবেন না; কিন্তু ছাত্রদলকে কেন ভোট দেবেন- সেটা তারা ছাত্রদের সামনে তুলে ধরতে পারেনি। নিজেদের কোন সুর্দিষ্ট কর্মসূচি ছিলো না, বক্তব্যের অর্ধেকটা জুড়ে থাকতো শিবিরের সমালোচনা।
পাঁচ.
অনলাইন এক্টিভিস্টরা জনমত গঠনে বড় ভূমিকা রাখেন; কিন্তু বিএনপিপন্থী এক্টিভিস্টরা বেশিরভাগ সময় পার করেন শিবির ও এনসিপির কুৎসা করে। তারা ছাত্রদলকে যেমন পজেটিভলি উপস্থাপন করতে পারতো, তেমনি ঢাবি শাখার নেতাদের বলতে পারতো ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি দিতে। নিজের দল থেকে গঠনমূলক সমালোচনা উঠলে সেটি বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। ছাত্রদল সেটা পায়নি। উল্টো মানসুরা ছাত্রীদের ‘সেবাদাসী’ বলেছেন, আরো অনেকে চরম নারী বিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন সাম্প্রতিক সময়ে। যেগুলো ভোটারদের ক্ষুদ্ধ করেছে।
খেয়াল করেন, কালকে যখন সাহস ভিসিকে ধমক দিলো- সেটার সাফাই গাইতে শুরু করলো অনলাইন এক্টিভিস্টরা। আগামী নির্বাচনের আগে এই ধমকের কথা কি ছাত্রদের মনে পড়বে না!
ছয়.
গত এক বছরে ঢাবি ক্যাম্পাসে পাখির বাসা স্থাপন ছাড়া ছাত্রদলের তেমন কোন কর্মসূচি দেখা যায়নি। আবার শিক্ষার্থীরা যখন হলে হলে কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তখন তারা হল কমিটি দিয়েছে। সেই কমিটিতে আবার অনেকগুলো ছাত্রলীগ পাওয়া গেছে।
সাত.
সারাদেশে বিএনপি ও যুবদলের কর্মকাণ্ড তাদের ভুগিয়েছে। যদিও ঢাবি ছাত্রদল গত এক বছরে কোন বিতর্কের জন্ম দেয়নি; কিন্তু সারাদেশে যা ঘটেছে তার ফল ভোগ করেছে তারা।
আট.
ভোটের ফল প্রত্যাখান করা ছিল আরেকটি ভুল। যে পাঁচ হাজার ছেলে আবিদকে ভোট দিয়েছে তারা বিষয়টি বাজেভাবে নেবে। আবিদের উচিত ছিলো তাদের রায়কে মর্যাদা দেয়া। আগামী বছর ভোট চাইতে গেলে এই ছেলেগুলো সে প্রশ্ন তুলতেই পারে।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।