শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

তেঁতুলিয়ার ভাঙনে অস্তিত্বহীন এভারেস্টজয়ী মুহিতের গ্রাম

এম জামাল বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধি।।

তেঁতুলিয়া নদীর ঢেউ একদিকে সৌন্দর্য, অন্যদিকে আতঙ্ক। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়নের কোল ঘেঁষে বয়ে চলা এই নদীই আজ গ্রাস করছে এভারেস্ট জয়ী মুহাম্মদ আবদুল মুহিতের শৈশবের গ্রাম। গঙ্গাপুরের মানুষ একদিকে গর্বিত মুহিতের সাফল্যে, আবার অন্যদিকে দিশেহারা নদীভাঙনের ভয়ে।

এভারেস্ট জয়ীর জন্মভূমি-

২০১২ সালের ২১মে বাংলাদেশের দ্বিতীয় নাগরিক হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন মুহাম্মদ আবদুল মুহিত। তিনি জন্মেছিলেন এই গঙ্গাপুরেই। একসময় নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে দূরে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন, একদিন তিনি দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন। মুহিতের সেই স্বপ্ন পূরণ হলেও তাঁর গ্রাম আজ হারানোর পথে।

নদীভাঙনের থাবা-

তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে গত এক দশকে গঙ্গাপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ বসতভিটা, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গঙ্গাপুরের নায়েব বাড়ি ,সিকদার বাড়ি, খালদার বাড়ি আমানুল্লাহ হাওলাদার বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য ছড়িয়ে আছে লোকের মুখে মুখে। ভাঙনের আতঙ্কে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। সবকিছু হারিয়ে যেন আজ অনেকেই পথে বসেছে।

স্থানীয় শিক্ষক আব্দুর রব হেলাল বলেন, “এই গ্রাম থেকে একজন এভারেস্ট জয়ী জন্ম নিয়েছেন—এটাই আমাদের গর্ব। কিন্তু ভাঙনের কারণে সেই ইতিহাস হয়তো নদীর গর্ভেই হারিয়ে যাবে।”

ইকোপার্কের স্বপ্ন ভাঙন-

২০১৬ সালে গঙ্গাপুরে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘তেঁতুলিয়া রিভার ইকোপার্ক’। এটি একসময় ছিল শত শত পর্যটকের ভিড়ের কেন্দ্র। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কটি আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত। যে বেঞ্চে বসে তরুণরা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করত, এখন সেটা পরিত্যক্ত।

মানুষের আর্তনাদ-

মাছধরা নৌকার মাঝি মোঃ মামুন (৩২) বলেন, “নদী আমাদের রিজিকের মাধ্যম বটে , আবার কাঁদায়ও। প্রতিদিন ভাঙনের খবর শুনি, কে জানে আগামীকাল কার ঘর ভেসে যাবে।”
অন্যদিকে অনেক তরুণ মনে করেন, নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণ ও ইকোপার্ক সংস্কার হলে এলাকাটি আবারও পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

সম্ভাবনার আলো-

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন বলছেন, সরকারের উদ্যোগ ও বরাদ্দ পেলে নদীর ভাঙন রোধ ও পর্যটন উন্নয়ন সম্ভব। এতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে, আর এভারেস্ট জয়ীর গ্রাম হয়ে উঠবে জাতীয় গর্বের স্মারক।

শেষকথা-

গঙ্গাপুর শুধু একটি গ্রাম নয়, এটি বাংলাদেশের স্বপ্ন ও অর্জনের প্রতীক। এখানেই জন্মেছিলেন এভারেস্ট জয়ী মুহাম্মদ আবদুল মুহিত। কিন্তু তেঁতুলিয়ার অবিরাম ভাঙন গ্রাস করছে সেই স্মৃতি, সেই ইতিহাস। নদীকে রক্ষা করা গেলে শুধু গঙ্গাপুর নয়—বাংলাদেশের এক টুকরো গৌরবই টিকে যাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *