শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

বরিশাল-৪: মাঠে শক্ত অবস্থানে বিএনপি–জামায়াত, ছন্দহীন ইসলামী আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসন এখন রীতিমতো হটস্পট। তরুণ ভোটার থেকে শুরু করে প্রবীণ-সবাই এখন আলোচনায় রাখছেন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের। মাঠপর্যায়ের চিত্র বলছে, এ আসনে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে হতে যাচ্ছে জমজমাট হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

বিএনপিতে বিভাজন, তবুও তরুণদের ভরসা রাজিব:
বিএনপির তরুণ প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানকে নিয়ে হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জে বেশ সাড়া দেখা যাচ্ছে। কিন্তু দলটির অভ্যন্তরে গ্রুপিং ও নানা কোন্দল তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তিনি মাঠ চষে বেড়ালেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিভক্ত অবস্থান তার নির্বাচনী সমীকরণে কিছুটা প্রভাব ফেলবে। তারপরেও তরুণ ভোটারদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকায় শেষ সময়ে পরিস্থিতি তার পক্ষে ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি, আব্দুল জব্বার মাঠে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী:
অন্যদিকে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামাতের আমির মাওলানা আব্দুল জব্বার বরিশাল-৪ আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। বরিশাল জেলা জামায়াতের আমির হওয়ার সুবাদে তার সাংগঠনিক ভীত অত্যন্ত মজবুত। অতীতে হিজলার বড়জালিয়া, উলানিয়া ও গোবিন্দপুর ইউনিয়নে ধারাবাহিকভাবে জামায়াতঘনিষ্ঠ প্রার্থীরা ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় এ অঞ্চলে তাদের ভোটব্যাংক সুসংগঠিত ও সক্রিয়।

এলাকাবাসী জানায়, বহুবছর ধরে মাঠে নিয়মিত সক্রিয় থাকায় আব্দুল জব্বারের সঙ্গে মানুষের নিবিড় যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। তিনি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করছেন। জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করে সম্ভাব্য সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়েছে তার।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আলোচনায় নেই:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ এছাহাক মো. আবুল খায়ের হাতপাখা প্রতীকে লড়ছেন। তবে মাঠপর্যায়ে তার তৎপরতা তেমন চোখে না পড়ায় সাধারণ ভোটারদের কাছে খুব একটা আলোচনায় নেই। দলীয় কিছু রিজার্ভ ভোট থাকলেও নির্বাচনি সমীকরণে তিনি বড় কোনো প্রভাব ফেলবেন-এমন সম্ভাবনা এখনো তৈরি হয়নি।

জোটবদ্ধ হলে পাল্টে যাবে সমীকরণ:
স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা মনে করেন-“এই আসনে দাড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী এখন বিএনপির চেয়ে এগিয়ে। জাতীয় স্বার্থে এ আসনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে জব্বারই জয়ের সম্ভাবনায় এগিয়ে থাকবেন।” বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসলামী জোট (চরমোনাইসহ) যদি মাওলানা আব্দুল জব্বারকে একক প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়, তাহলে নির্বাচন একতরফা হয়ে যেতে পারে। কারণ ধর্মভিত্তিক ভোটারদের মধ্যে জামায়াত ও চরমোনাই-এর ভোট ব্যাংকের মিল এই অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য।

শেষ মুহূর্তে তৈরি হতে পারে চমক:
বরিশাল-৪ আসনে এখনো যে কোনো মুহূর্তে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে পারে। তরুণদের ঢল বিএনপির শক্তি বাড়াচ্ছে-আবার জামায়াতের পুরনো সংগঠনিক বলয় ও মাঠপর্যায়ের নিরলস যোগাযোগ আব্দুল জব্বারকে শক্ত ভিত্তি দিচ্ছে।

নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হওয়ায় রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়বে-এটা নিশ্চিত। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কে এগিয়ে যায় বরিশাল-৪ এর সবচেয়ে উত্তেজনাকর লড়াইয়ে।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *