শনিবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৫

বরগুনার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভয়াবহ সঙ্কট

বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো চরম সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসক ও জনবল স্বল্পতা, নিয়মিত ওষুধের অভাব এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে অধিকাংশ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এতে উপকূলীয় ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার প্রায় ৩০টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বেশিরভাগ জায়গাতেই দীর্ঘদিন ধরে নেই স্থায়ী চিকিৎসক। কোথাও চিকিৎসক থাকলেও নিয়মিত আসেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। অনেক কেন্দ্রে নার্স, হেলথ ভিজিটর, টেকনিশিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ বছরের পর বছর শূন্য।

বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা ও বেতাগী উপজেলার অনেক কেন্দ্রেই বছরের পর বছর চিকিৎসক নেই। কোথাও শুধুমাত্র একজন পিয়ন দিয়ে নামমাত্র কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি তীব্র হয়েছে ওষুধের অভাব। অনেক কেন্দ্রে মাসের পর মাস সরকারি ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, সাধারণ সংক্রমণসহ মৌলিক রোগের ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র, নেবুলাইজার, থার্মোমিটারসহ জরুরি সরঞ্জামেরও অভাব রয়েছে।

ফলে রোগীরা চিকিৎসার আশায় এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। স্থানীয় ইশরাত জাহান লিপি বলেন, ভবন আছে, সাইনবোর্ড আছে, কিন্তু ডাক্তারও নেই, ওষুধও নেই। তাই রোগীরাও আর আসে না।

বুড়িরচর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী উম্মে সালমা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ডাক্তার নেই। ওষুধও খুব সীমিত আসে। রোগীরা এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যান।

বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় গ্রামীণ মানুষ চরম সমস্যায় পড়ছে। বারবার জানানো হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই। তিনি সপ্তাহে অন্তত তিন দিন একজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট বসানোর দাবি জানান।

বরগুনা জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল হক আজাদ বলেন, কিছু কেন্দ্রে জনবল ও ওষুধ সংকট রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শূন্য পদ পূরণ ও নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ দ্রুতই স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর এই বেহাল অবস্থা গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থার সামগ্রিক দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলছে। দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ, পর্যাপ্ত জনবল, ওষুধ সরবরাহ ও সরঞ্জাম নিশ্চিত না হলে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কার্যত কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।

আরো পড়ুন

আমতলীতে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি, পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক

আমতলী প্রতিধিনি বরগুনার আমতলী উপজেলার ১৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *