বেতাগী প্রতিনিধি
বরগুনার বেতাগীতে এ বছর আমন ধানের ফলন অনেক ভালো। সোনালি ধানের শীষে হাসি ফুঠেছিল কৃষকের মুখে। তবে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ও শ্রমিক সংকট নিয়ে সেই কৃষকের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনার বেতাগী উপজেলায় এ বছর ১০ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় জাতের আমন চাষ করা হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের প্রধান ফসল আমন হওয়ায় জেলার ৫৫ ভাগ জমিতে বি-আর, ব্রি ও বিনা—এই তিন জাতের উফশী ধান আবাদ করা হয়েছে। বাকি ৪৫ ভাগ জমিতে আবাদ করা হয় স্থানীয় জাতের আমন। যথাসময় আমনের বীজ বপন ও পরিচর্যায় ভালো ফলনের সম্ভাবনায় স্বপ্ন বোনে কৃষক। সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ধানক্ষেতে গেলে কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলে জাতভেদে আমন ধান এক সপ্তাহ আগেই কাটা শুরু হয়েছে।
ইতিমধ্যে উচুঁ জমির এক তৃতীয়াংশ কাটা শেষ হয়েছে। কিন্তু নিচু জমির ধান এখনো পাকেনি। তারা জানান, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মাঠের ধান ঘরে তুলতে না পারলে তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে নিচু সমতল জমির ফলন ভালো হলেও শ্রমিককে দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা।
এর পরও মিলছে না শ্রমিক। ফলে যথাসময়ে অবশিষ্ট জমির ফসল ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তিত তারা। পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ষাটোর্ধ্ব কৃষক গোলাম হোসেন বলেন, ‘আমার চাষযোগ্য চার বিঘা জমির দুই বিঘায় আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল আমন ধান জমিতেই বিনষ্ট হয়ে যায়। বাকি দুই বিঘা জমির ধান ভালো হলেও দ্বিগুণ টাকা দিয়েও সঠিক সময় শ্রমিক পাই না। ঠিক সময় ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রুস্তম আলী মুদি দোকান পরিচালনা করেন। তিনি শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করলেও এখন শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে চিন্তিত। দোকান বন্ধ করে মাঠে নিজেই ধান কেটে একাই আঁটি বাঁধছেন।
বিবিচিনি ইউনিয়নের পুটিয়াখালী গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব কৃষক সুকুমার হাওলাদার বলেন, গত বছর ছয়-সাতজন শ্রমিক এক বিঘা ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করে দিলে প্রায় আড়াই মণ ধান দিতে হতো। এবার শ্রমিকরা সাড়ে চার-পাঁচ মণ চাচ্ছেন। তারা ধান কাটা বাদ দিয়ে বেতাগী পৌর শহরে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন।
ধানের বদলে টাকা দিলে একজন শ্রমিককে এখন একবেলার জন্যই দিতে হচ্ছে ৮০০ টাকা ৯০০ টাকা। দ্বিগুণ টাকায়ও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিক না পেয়ে বেতাগী সদর ইউনিয়নের বাসণ্ডা গ্রামের এলাকার নিজের জমিতে একাই ধান কাটছিলেন কৃষক বাবুল বিশ্বাস। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে তারা বেতাগী পৌরশহরে গিয়ে আসবাবপত্র তৈরির মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছেন। তার মতো এভাবে একই এলাকা থেকে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত একাধিক শ্রমিক পৌর শহরের বিভিন্ন কাজ করার ফলে গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক-সংকট দেখা দিচ্ছে।’
বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অটোরিকশাচালক রতন শীল জানান, দুই বছর আগেও তিনি কৃষিকাজ করতেন। শ্রমিকের বেতন ও উৎপাদন খরচ মেটাতে ব্যয় বেশি হওয়ায় কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি পৌর শহরে অটোরিকশা চালিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ করছেন।
পৌর শহরের রিকশাচালক রাখাল চন্দ্র ঢালী ও বিমল পরামানিক বলেন, ধানকাটা মৌসুমে কাজ করলে কিছুদিন কাজ করা যায়। মৌসুম শেষে আবার রিকশা চালাতে হয়। তাছাড়া কৃষি কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করলে যে টাকা আয় হয় তার চেয়ে পৌর শহরে রিকশা চালালে বেশি টাকা পাওয়া যায়।’
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।