মইনুল আবেদীন খান সুমন, বরগুনা
একসময়ের খরস্রোতা খাকদোন নদী-যা আজ নাব্যতা সংকট, দখলদারিত্ব ও অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের চাপে ধুঁকছে। পশ্চিমের বিষখালী নদী পূর্বদিকের পায়রা নদী বরগুনার বুক চিরে সংযুক্ত করা ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটির প্রায় আট কিলোমিটার অংশ পলি জমে ভরাট হয়ে এখন আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। প্রমত্তা পায়রা ও বিষখালী এই দুই নদীকে কেন্দ্র করে যে একসময় খরস্রোতা খাকদোন নামের একটা ছিল পূর্ব দিকের ৮ কিলোমিটার সরজমিনে দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবেন না যে একসময় এখানে এই খরস্রোতা একটা নদীর অস্তিত্ব ছিল। ৮ কিলোমিটার দূরে একটা বিশাল এরিয়ায় আবাসিক এলাকায় হিসেবে গড়ে ওঠায় স্রোতধারা হারিয়ে নৌ–যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদীর দুই পাড় দখল করে গড়ে তোলা বসতবাড়ি, বর্জ্য ফেলা এবং নিচু সেতু নির্মাণ নদীটিকে দিনে দিনে মরা খালে পরিণত করেছে।
খাকদোন নদীতে নির্মিত ২১টি নিচু সেতুর কারণে জোয়ারের সময় নৌযান চলাচল কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত এসব সেতুর নিচ দিয়ে বড় নৌকা বা ইঞ্জিনচালিত লঞ্চ বা ট্রলার চলতে পারে না। পাশাপাশি নদীর তীরজুড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলদারিত্ব, জেলা শহরের বর্জ্য ফেলা এবং স্রোতধারা না থাকায় নদীটি প্রতিনিয়ত পলি দিয়ে ভরাট হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ড্রেজিং করা হলেও ড্রেজ করা বালু সঠিকভাবে অপসারণ না করায় বর্ষা মৌসুমে তা আবার নদীতেই ফিরে আসে। ফলে ‘ড্রেজিংয়ের নামে কোটি টাকা খরচ হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না’-এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মোস্তফা কাদের বলেন, খাকদোন নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হলে বিষখালী থেকে পায়রা পর্যন্ত পূর্বের নকশা অনুযায়ী পুনঃখনন করা, স্রোতধারা নিশ্চিত করা এবং নিচু সেতুর পরিবর্তে পরিকল্পিত উচ্চ সেতু নির্মাণ জরুরি। থাকি ধারনা পোষণ করেন বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়রা।
বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক মনির হোসেন কামাল অভিযোগ করে বলেন, খাকদোন নদী দখলমুক্ত করতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বহু বছর ধরে শুনছি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ আলোর মুখ দেখেনি। নদীটির নাব্যতা ফেরাতে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হান্নান প্রধান জানান, খাকদোন নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধারে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। কেওড়াবুনিয়া থেকে পায়রা নদীর সংযোগস্থল থেকে পশ্চিমে বিষখালী নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার পূর্বকার নকশা অনুযায়ী প্রশস্ত করে পুনঃখনন করা হবে। তিনি আরও জানান, বরগুনায় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক খাল খনন করা হয়েছে এবং কচুরিপানা অপসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলমান। নদী-খাল দখলমুক্ত করা নিয়মিত প্রক্রিয়া। খাকদোন নদীর দখলদারদের উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দীর্ঘদিনের অবহেলা, দখল ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন খাকদোন নদীকে আজ মৃতপ্রায় করে তুললেও সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগ নিলে এই ঐতিহ্যবাহী নদী তার যৌবন ফিরে পেতে পারে-এমন আশার কথা বলছেন স্থানীয়রা।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।