শনিবার, মে ৩, ২০২৫
kalapara
kalapara

কলাপাড়ায় মধ্যরাতে দু:স্থদের বরাদ্দের দুম্বার গোস্ত বিতরণে অনিয়ম

বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠু, কলাপাড়া প্রতিনিধি॥

কলাপাড়ায় দু:স্থদের মানবিক সহায়তার রাজকীয় সৌদি আরব সরকারের কোরবানির গোস্ত মধ্য রাতে নিজের বন্ধু ও প্রভাবশালীদের মাঝে বিতরন করলেন উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান কর্মকর্তা (পিআইও)। মানবিক সহায়তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুসরন না করে দু:স্থদের বরাদ্দকৃত গোস্ত এভাবে বিতরন করায় ফুঁসে উঠেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। পিআইও অফিস সূত্রের দাবী, মানবিক সহায়তা নির্দেশিকা অনুসরন করেই এতিমখানা ও মাদ্রাসায় বিতরন করা হয়েছে রাজকীয় সৌদি আরব সরকার কর্তৃক প্রেরিত কোরবানীর গোস্ত। তবে বিতরন সংক্রান্ত কোন তালিকা দেখাতে পারেনি পিআইও অফিস।

সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে দু:স্থদের মাঝে বিতরনের নিমিত্তে রাজকীয় সৌদি আরব সরকার কর্তৃক ২১৪ কার্টুন সৌদি কোরবানীর গোস্ত বরাদ্দ দেয়া হয় জেলার ৮টি উপজেলায়। কলাপাড়া উপজেলায় উপ-বরাদ্দ দেয়া হয় ৩৩ কার্টুন। প্রতি কার্টুনে ১০ প্যাকেট ও প্রতি প্যাকেটে ২ কেজি করে মোট বরাদ্দের পরিমান ৬৬০ কেজি। যা নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রাপ্তির জন্য বিবেচ্য দু:স্থ ও অতিদরিদ্র পরিবার, সাময়িক খাদ্য সংকটে পতিত বিভিন্ন পেশার দরিদ্র সম্প্রদায়, অপুষ্টির ঝূঁকিতে থাকা প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থী বৃন্দ, ধর্মীয় উৎসব পালনের জন্য বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠী। প্রত্যক্ষ দর্শী অপর একটি সূত্র জানায়, সোমবার (৯ডিসেম্বর) মধ্যরাতে দু:স্থদের উপ-বরাদ্দের এ গোস্ত মানবিক সহায়তা নির্দেশিকা অনুসরন ছাড়াই সিপিপি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিতরন করেন সদ্য যোগদানকৃত পিআইও মো. মোকসেদুল আলম। সারা বাংলা এসএসসি ৯৭ ব্যাচের বন্ধুদের সহ কতিপয় সাংবাদিক ও প্রভাবশালীদের ওই অফিস কক্ষ থেকে গোস্ত নিতে দেখা যায়। এসময় গোস্ত নিয়ে তার সাথে বাক বিতন্ডাও হয় দু’একজন প্রভাবশালীর।

কলাপাড়া পৌরশহরের এতিমখানা হাফিজিয়া মাদ্রাসার দায়িত্বপ্রাপ্ত মাওলানা মো. মুসা বিশ্বাস জানান, সোমবার রাতে তাকে পিআইও অফিস থেকে গোস্ত নিতে বলেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সম্পাদক। পরে মাদ্রাসার একজন শিক্ষককে পাঠালে তিন প্যাকেট গোস্ত দেয়া হয় তার কাছে। এসএসসি সারা বাংলা ৯৭ ব্যাচের পিআইও’র বন্ধুদের একজন বলেন, ’২০২২ সালে কুয়াকাটায় সারা বাংলা গ্রুপের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে পিআইও’র সাথে তার পরিচয় হয়। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে এক প্যাকেট গোস্ত দেন
সিপিপি কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান। তখন ইউএনও অফিসের কর্মচারী সহ ক’জন সাংবাদিককে সেখানে দেখেন তিনি।’

এদিকে তথ্য যাচাইয়ে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে পিআইও কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে পিআইওকে অফিসে পাওয়া যায়নি। অফিস সহকারী মো. হাফিজ জানান, যথাযথ ভাবে দুম্বার গোস্ত বিতরন করা হয়েছে। এসময় বিতরনের তালিকা দেখতে চাইলে অফিসে তার কাছে তালিকা নেই বলে জানান তিনি। বিতরন তালিকা রয়েছে সিপিপি কর্মকর্তার অফিস কক্ষে, যেটি বর্তমানে তালাবদ্ধ থাকায় তিনি দেখাতে পারছেন না। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কলাপাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি ও কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শামসুল আলম বলেন, ’মধ্যরাতে দু:স্থদের বরাদ্দের দুম্বার গোস্ত পিআইও তার বন্ধু ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিয়েছেন। এটি কোনভাবেই সঠিক হয়নি। এনিয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সংক্ষুব্দ হয়েছেন।’

এ বিষয়ে কলাপাড়ায় সদ্য যোগদানকৃত পিআইও মো. মোকসেদুল আলম বলেন, ’তিনি চলমান উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে ফিল্ডে রয়েছেন। অফিসে ফিরে এ নিয়ে কথা বলবেন। এ ছাড়া দুম্বার গোস্ত যথাযথ নির্দেশনা অনুসরন করে দু:স্থদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে বলে দাবী তার।’ জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ বলেন, ’তিনি এখনও বিতরন তালিকা পাননি। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন।

আরো পড়ুন

বরিশালে গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। দিনরাত খেটেও সপ্তাহে একদিনের ছুটি পান না গৃহকর্মীরা। তাদের কাজের নির্দিষ্ট কোনো …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *