নুর উল্লাহ আরিফ, চরফ্যাশন (ভোলা)
চরফ্যাশনের উত্তর আইচা মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবোর) জমি মৎস্য চাষের জন্যে ৩ বছরের লিজ নিয়ে স্থানীয় মানুষের কাছে ৯৯ বছরের জন্য বিক্রি করে দিলেন স্থানীয় মৃত জলিল সর্দার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকি না থাকায় লোকজন এ জায়গায় বাড়িঘর তৈরি ও পুকর কেটে বসবাস করছে। জলিল সর্দার মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী মিনারা বেগম নানা অজুহাতে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের পকেটে ভারী করছে। তবে এসব অপকর্মের নেপথ্য নায়ক পাউবো ভোলা ২ এর গাড়ির ড্রাইভার বাবুল । ৩ বছরের জন্য লিজ দিয়ে এসব জমির বিষয়ে কোন খোঁজ না রাখায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ পাউবির কর্মকর্তাদের ওপর। অন্য দিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৬৬-৬৭ সালে এল এ মামলা নং ১২৩ এ ৬০ দশমিক ৭৮ একর জমি ক্লোজার বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার একোয়ার নেয়। এসব জমি রসুলপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের উত্তর আইচা মৌজার বিভিন্ন দাগ নাম্বারে স্থানীয় মৃত মোখলেছ সর্দারের ছেলে জলিল সর্দার ৯ দশমিক ৫৪ ও তার ভাই অলিউদ্দিন ৯ দশমিক ৪৪ একর জমি ২০১২ সালে চাষযোগ্য জমি মৎস্য চাষের জন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৩ বছরের জন্য লিজ নেয়। কিন্তু জলিল জমি লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ না করে স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের কাছে প্রতি ৮ শতাংশ জমি ২০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে দেয়। তখন ৯৯ বছরের জন্য লিজের কথা বলে তাদের কয়েকজনকে নন রেজিস্ট্রি স্টাম্প দেয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকি না থাকায় বাড়িঘর সৃজন করে তথাকথিত ক্রয়কারীরা এসব জমিতে বসবাস করছে। কিন্ত প্রতি বছর নতুন নানা রকম কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিত জলিল সর্দার। জলিল সর্দার মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী এসব জমি লিজ নবায়নের নামে তাদের কাছে টাকা দাবী করে। বসবাস করা লোকজন টাকা দিতে না চাইলে জলিলের স্ত্রী তাদেরকে নানারকম ভয় ভীতি সৃষ্টি করে মানসিক নির্যাতন করত। এমনকি সে এ কাজে পাউবোর কর্মকর্তা হিসেবে ব্যবহার করে ভোলা ২ চরফ্যাশন অফিসের ড্রাইভার বাবুল । বাবুল নিজেকে পাউবোর কর্মকর্তা দাবী করে জলিলের স্ত্রীর মাধ্যমে জমি ক্রয় করা লোকদের কাছ থেকে টাকা নিয়মিত টাকা নিত। জলিল সর্দারের স্ত্রীর প্রাপ্ত টাকা থেকে বড় একটি অংশ যায় ড্রাইভার বাবুলের পকেটে।
পাউবোর জমিতে বসবাসরত কয়েকজন জানান, গত আওয়ামী লীগের আমলে আমাদেরকে ৯৯ বছরের কথা বলে জলিল আমাদের কাছে এ জমি বিক্রি করে। ৫ আগস্টের পর জলিলের স্ত্রী আমাদের কাছে আবারও টাকা দাবী করে বলে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, তাই নতুন করে আবার জমিনের কাগজপত্র করতে হবে, যার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। স্থানীয় এক নারী জানান, জলিল আওয়ামী লীগ করত। যার জন্য আমরা তার কোন অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বললে সে আমাদের ওপর নির্যাতন করত। এ নারী আরো বলেন, জলিলের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে তার পা ভেঙে দেয় জলিল। স্থানীয় মফিজ হাওলাদার জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাবুলসহ অনেকের সাথে জলিলের স্ত্রীর সখ্যতা রয়েছে। যার দরুণ এ কর্মচারীদের জলিলের বাসায় নিয়মিত আসা যাওয়া। জলিলের স্ত্রী মিনারা- বাবুলসহ তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের কর্মকর্তা বানিয়ে প্রায়ই বসবাসরতের কাছে টাকা পয়সা দাবী করে। হাওলাদারসহ স্থানীয়দের প্রশ্ন বাবুলের খুটির জোর কোথায়? কোন ক্ষমতার বলে সে নির্দিদ্বায় এমন অপকর্ম করে যাচ্ছে। সে বদলী হয়ে অন্যত্র গেলেও কীভাবে আবার এখানে ফিরে আসে? অভিযোগ রয়েছে বাবুল এসব অপকর্ম করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
এ ব্যাপারে জলিলের স্ত্রী মিনারা বলেন, আমরা লিজ নিয়ে মানুষকে আশ্রয় দিয়েছি। তবে, তিন বছর পরপর জমি লিজ নিতে হয়, সেটা তাদেরকে বলছি। এসব বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর ড্রাইভার বাবুল বলেন, আমি মিনারাদের বাসায় গিয়েছি। মিনারা আমাকে মাঝে মাঝে জমি লিজ নেওয়ার জন্য ফোন করে। এখন তো লিজ নেওয়া বন্ধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন -২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদ্দৌলা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি বিক্রি করার সুযোগ নেই। যদি কেউ বিক্রি করে থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Daily Bangladesh Bani বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের দৈনিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সমাজের অন্ধকার দিকগুলো উন্মোচন করে প্রতিটি মানুষের সমান অধিকারের প্রচার করি।