শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

আমি যে পথের পথিক

খাজা মাসুম বিল্লাহ কাওছারী।।

প্রায়ই আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে—আমি কোন রাজনীতি করি, আমি কোন দলের সঙ্গে আছি, অথবা কোন মতাদর্শকে অনুসরণ করি। প্রশ্নটি শুনলেই আমি মৃদু হেসে দিই। কারণ আমার উত্তর খুবই সরল—আমি কোনো রাজনীতি করি না, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী বা নেতা নই। রাজনীতির ক্ষমতার খেলা, দলে দলে বিভাজন কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের দৌড় আমার জন্য নয়।

তবে এর মানে এই নয় যে আমি সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপারে নির্লিপ্ত। আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো মানুষের জীবনকে যদি সত্য, সততা ও ইনসাফের মানদণ্ডে দাঁড় করানো না যায়, তবে তার রাজনীতিও মূল্যহীন, নেতৃত্বও ব্যর্থ। তাই আমি বলি—যে ব্যক্তি সততার কথা বলবে, ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথা বলবে, বিভাজনহীন ঐক্যের কথা বলবে, ধর্মীয় মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা করবে—আমি তার পাশে দাঁড়াবো।

আমার জীবনের রোল মডেল কোনো ক্ষমতাশালী ব্যক্তি নয়। আমি মুগ্ধ হই তাদের প্রতি, যারা নিভৃতে আলো ছড়ায়। এরা প্রচারের মঞ্চে নয়, বরং সমাজের আড়ালে অদৃশ্য অথচ দৃঢ় আলো হয়ে থাকে। তাদের জীবন সরল, কিন্তু প্রভাব গভীর। তারা দেখিয়ে দেয়, মানুষকে ভালোবাসা আর ন্যায় প্রতিষ্ঠাই প্রকৃত নেতৃত্ব।
এই শিক্ষা আমি নিয়েছি বড়দের কাছ থেকে,আমার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে যেমন খান বাহাদুর নবাব খাজা আহসান উল্লাহ, সুফি খাজা ফয়েজ উদ্দিন (রহ:) ও খাজা নাছের আলী (রহ:) এদের কাছ থেকে এবং আধ্যাত্মিক সাধকদের জীবন থেকে। মাওলানা রুমি (রহ.) এক গভীর সত্য বলেছেন—
“যে ব্যক্তি অজ্ঞ অথচ গর্বিত, তাকে যদি আসনের মালিক বানানো হয়, তবে সে সমাজকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়। আর যে ব্যক্তি জ্ঞানী অথচ বিনয়ী, তাকে যদি পদস্থ করা হয়, তবে সে সমাজে আলো ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।”
এই কথাটি আমার কাছে এক জীবন্ত নীতি। কারণ আমি নিজ চোখে দেখেছি, সমাজে যখন ক্ষমতা যায় অজ্ঞ ও গর্বিত মানুষের হাতে, তখন কীভাবে মানুষ দুঃখ-কষ্টে ভোগে। আবার আমি দেখেছি, বিনয়ী ও জ্ঞানী মানুষের হাতে নেতৃত্ব গেলে কীভাবে মানুষের হৃদয়ে স্বস্তি নামে।

আমার পথচলা স্পষ্ট। আমি তাদের সঙ্গে নেই, যারা সমাজকে ভেঙে দিয়ে কেবল নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চায়। আমি তাদের সঙ্গে নেই, যারা আত্মঅহংকারে তাকাব্বুরের পাহাড় গড়ে নিজেদের বড় করে তুলতে চায়। আমি তাদের সঙ্গে নেই, যারা মানুষের অর্থ হরণ করে, দুর্নীতির জালে সমাজকে বন্দী করে, ইনসাফহীনতা দিয়ে মানুষকে দমন করতে চায়।

এদেরকে আমি দেখেছি, কাছ থেকেও চিনেছি। এরা সমাজের আসল শত্রু। এরা একদিকে বড় বড় কথা বলে, অন্যদিকে মানুষের জীবন থেকে কেড়ে নেয় নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার।

আমি সবসময় দাঁড়াই সেই আলো-সন্ধানী মানুষের পাশে, যারা সমাজকে আলোকিত করতে চায়।
আমি আছি তাদের সঙ্গে, যারা সত্যের পতাকা উঁচিয়ে ধরে।
আমি আছি তাদের সঙ্গে, যারা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে।
আমি আছি তাদের সঙ্গে, যারা বিনয়ী, সততার পথে অবিচল, আর মানুষের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয়।
আমার জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে—আলো-সন্ধানীরা হয়তো সংখ্যায় কম, কিন্তু তারাই সমাজকে এগিয়ে নেয়। অন্ধকারের সাথে কখনোই আপস করে না তারা।

আমি রাজনীতিবিদ নই, আমি কোনো দলের নেতা নই। আমি কেবল একজন সাধারণ মানুষ, যে সত্য ও ন্যায়ের পথে হাঁটতে চায়। সমাজের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা হলো—অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করা, মিথ্যার সঙ্গে সমঝোতা না করা, আর মানুষের কল্যাণের জন্য যিনি কাজ করেন তার পাশে দাঁড়ানো।

আমার অবস্থান তাই সবসময় স্পষ্ট—
আমি নেই ক্ষমতার দম্ভকারীদের দলে, আমি নেই অন্যায়কারীদের দলে।
আমি আছি সত্য, ন্যায়, সততা ও আলো-সন্ধানী মানুষের পাশে।

আমার পথচলা নিভৃত হলেও, আমার স্বপ্ন স্পষ্ট—একটি আলোকিত সমাজ, যেখানে মানুষ বিভক্ত নয়, ঐক্যবদ্ধ; যেখানে অন্যায় নয়, ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, বেসরকারি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের কর্ম-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *