সোমবার, ডিসেম্বর ৮, ২০২৫

বরগুনা ধ্বংসস্তূপ স্বাধীনতা জাদুঘর, অবহেলায় হারাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি

মইনুল আবেদীন খান সুমন, বরগুনা
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের হামলা—ভাঙচুরের পর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বরগুনার একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর বরগুনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়। এর আগে এটি মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
বরগুনার প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী চিত্তরঞ্জন শীল বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালের দিকে মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাস ভিত্তিক বেশকিছু আলোক চিত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়। পর্যায়ক্রমে এটি জেলা প্রশাসনের আয়োজিত জাতীয় প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৩ সালের দিকে বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের নিচতলার একটি কক্ষে এটি মুক্তিযুক্ত গ্যালারী হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ২০১৮ সালে তৎকালীন বরগুনা জেলা প্রশাসক মো: মোখলেছুর রহমান ফলক উম্মোচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারী হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর তৎকালীন বরগুনার জেলা প্রশাসক মো: মোস্তাইন বিল্লাহ্ পরবর্তীতে এটিকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শিক্ষার্থী ও দর্শণার্থীরা জাদুঘরটি পরিদর্শন করে।
এ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাস ভিত্তিক ৩ শতাধিক আলোক চিত্র, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এবং স্থানীয় ভাবে প্রকাশিত নানা বই স্মরণিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত কাঠের তৈরী বন্দুক (ভাঙ্গা), পোশাক, রান্নার পাতিল, রামদা, ভোজালি সহ নানা তৈজসপত্র সংরক্ষিত ছিল। এছাড়া জাদুঘরটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে পরিণত করার লক্ষ্যে বরগুনায় স্থাপিত মোগল আমলের ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ এবং পার্শবর্তী পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মজিদ বাড়িয়া মসজিদে ব্যবহৃত ইট পাথরের অংশ সংরক্ষণ এবং মানুষের ব্যবহৃত পুরানো দিনের হারিয়ে যাওয়া নানা উপকরণ সংরক্ষিত ছিল।
কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন পরবর্তী ৫ আগস্ট অন্যান্য স্থাপনার সাথে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও হামলা—ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। ফলে এখন খালি কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। এটি নতুন করে পুনরায় নির্মাণ করা হবে কিনা সে বিষয়ে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে।
জাদুঘরটির অন্যতম উদ্যোক্তা চিত্তরঞ্জন শীল বলেন, মূলত কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ সমূহ নতুন প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যেই এ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আশাকরি বর্তমান সরকার সে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক মো: ইউসুপ মৃধা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার সুযোগ রয়েছে। তাই আমাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানানো হবে জাদুঘরটি পুনরায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে।

আরো পড়ুন

বরগুনার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভয়াবহ সঙ্কট

বরগুনা প্রতিনিধি বরগুনা জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো চরম সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসক ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *