বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪

শীতের শুরুতেই পর্যটকে মুখর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

মাহতাব হাওলাদার, মহিপুর প্রতিনিধি ‍॥
মোঃ মাহতাব হাওলাদার, মহিপুর প্রতিনিধিঃ সাগরকন্যা খ্যাত সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় দীর্ঘদিন পরে পর্যটকে চাঞ্চল্যতা ফিরতে শুরু করছে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ছুটির দিন উপলক্ষে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ বিভিন্ন পর্যটনস্পটে চোখে পড়ার মতো পর্যটক। তাই এবারের ট্যুরিস্ট মৌসুমে ব্যবসা-বাণিজ্য গতি পাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ৬০ -৭০ শতাংশ হোটেল-মোটেল কক্ষ বুকিং হয়েছে বলে হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও সেবা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পৌর কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটার শুঁটকিপল্লী, গঙ্গামতির সৈকত, রাখাইন পল্লী, ইকোপার্ক, ইলিশ পার্ক, লেম্বুর বন ও সৈকতের ঝাউবাগানসহ অধিকাংশ পর্যটনস্পটে এখন পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। আগত পর্যটকরা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগসহ সমুদ্রের জলে গা ভাসিয়ে আনন্দ উন্মাদনায় মেতে উঠছেন। আবার কেউ ছবি তুলছেন, কেউ ছাতার নিচে বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করছেন, আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ে পুরো সৈকতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দীর্ঘদিন পরে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় স্থানীয় ১৬টি পেশার মানুষের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের জন্য বিশেষ ছাড় ও সুবিধা দিচ্ছেন।
খুশির ছোঁয়া দেখা গেছে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের, ইতোমধ্যেই পর্যটকদের বরণ করতে সাজিয়ে নিচ্ছে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ , কেনাবেচার জন্য তৈরি রয়েছে রাখাইন মহিলা মার্কেট, ঝিনুক মার্কেট, বার্মিজ আচার, কাঁকড়া ফ্রাই, পর্যটকদের ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত ক্যামেরাম্যান, চটপটি ফুচকার দোকানে দেখা গেছে মানুষের আনাগোনা, কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ পিপাসা মেটানোর জন্য কাজ করতে প্রস্তুত, মোটরসাইকেল ড্রাইভার, অটোরিকশা চালক, কুয়াকাটা থেকে সমুদ্রপথে বিভিন্ন দ্বীপ ও বনাঞ্চল ভ্রমণ করানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ট্যুরিস্ট বোট, স্পিডবোট এবং ওয়াটার বাইক।
কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনোমুগ্ধকর ৩০ কিলোমিটার বেলাভূমি রয়েছে। পর্যটকরা এখানকার ট্যুরিজম পার্ক, জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক), শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার ঘুরে দেখেন। এছাড়া কুয়াকাটার পশ্চিমে সমুদ্র পথে ফাতরার বন, গঙ্গামতি, লাল কাঁকড়ার চর, কাউয়ার চর, লেম্বুর চর, শুঁটকিপল্লী এবং সমুদ্রের মাঝখানে জেগে ওঠা অতিথি পাখি ও লাল কাঁকড়ার সমাহার বিশিষ্ট চর বিজয় ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মাহাবুব রহমান বাবু দম্পতি বলেন, আমি পরিবার নিয়ে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসলাম। অনেক দিন আগে থেকে আসার ইচ্ছে কিন্তু মেয়ের পরীক্ষার কারণে আসতে পারিনি। ছুটি পেয়ে বেড়াতে এসেছি। মৌসুমের শুরুতে সূর্যোদয় উপভোগ করলাম। অনেক ভালো লেগেছে। এখানকার পরিবেশে অনেক সুন্দর কিছু সমস্যা থাকলেও অনেক ভালো লেগেছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ট্যুরিস্ট বোট মালিক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, আমরা আশাবাদী এ বছর কুয়াকাটায় অনেক ট্যুরিস্টের আগমন হবে। আবার আগের মত প্রাণ খুঁজে পাবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, হাসি ফুটবে সকল ব্যবসায়ীদের মনে।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, এবছর শীত মৌসুমে কুয়াকাটায় ট্যুরিস্ট বেশি আসবে বলে আমরা মনে করছি। ছুটির দিন উপলক্ষে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সৈকত।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক শাখওয়াত হোসেন বলেন, কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা সকল পর্যটকদের সেবা দেওয়া ও আইনি সহায়তা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। ছুটির দিনগুলোতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে। তাদের সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে। বিভিন্ন টিমে ভাগ হয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। সার্বক্ষণিক মাইকিং করে পর্যটকদের সকল বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটায় এবছর পর্যটকদের ভিড় বাড়বে এমন ধারণা মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। কুয়াকাটার বিভিন্ন স্পটগুলোতে ইতিমধ্যে আমরা টয়লেটে এবং বসার জন্য ব্যবস্থা করেছি। বাকি কাজ আমরা অল্পতেই শেষ করব, যাতে ট্যুরিস্টরা স্বাচ্ছন্দ্যভাবে সাইট ট্যুরগুলো করতে পারে এবং কোনো রকম ভোগান্তিতে না পড়ে।

আরো পড়ুন

মাদক থেকে যুবকদের দূরে রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই: মাফরুজা সোলতানা 

মো. মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী, দৌলতখান প্রতিনিধি ॥ ভোলা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহীমের সহধর্মিণী মাফরুজা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *