বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ৩০, ২০২৫

শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের পর মামলায় ফাঁসালেন ডিসি অফিসের কর্মচারী

নিজস্ব প্রতিবেদক॥
হাফেজি পড়ুয়া ছাত্রকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পর পরিকল্পিতভাবে চুরি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে। সেই মামলায় কারাবাস করতে হয়েছে শিশুটিকে। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শিশু শিক্ষার্থীর মা লামিয়া বেগম। এসময় তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানান।

অভিযুক্ত হাসিব হাওলাদার বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিনি জেলা প্রশাসকের বাসভবনে কর্মরত। এছাড়া নির্যাতনের শিকার শিশু আব্দুর রহিম (১৫) বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের হরিনাফুলিয়া এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর শরিফের ছেলে।

লিখিত বক্তব্যে লামিয়া বেগম বলেন, ‘তার শিশুসন্তান আব্দুর রহিম হরিনাফুলিয়া ডা. লতিফা আরিফ ইসলামিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের হাফিজি বিভাগের ছাত্র। মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় গত ২৪ জানুয়ারি বরিশাল নগরীর শ্রীনাথ চ্যাটার্জি লেনে ফুফুর বাসায় বেড়াতে যায়। ওইদিন রাতে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী হাসিব হাওলাদার ও তার দুলাভাই দ্বীন ইসলামসহ ৮-১০ জন মিলে আব্দুর রহিমকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ে অমানবিক ভাবে রহিমকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। এসময় তারা প্লাস দিয়ে আব্দুর রহিমের আঙ্গুলের নক তুলে ফেলার চেষ্টা করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে জখম করে। বিষয়টি শোনার পরে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তখন আমাকেও নির্যাতন করে। এমনকি আমাকে আমার নিজের ঘরে অবরুদ্ধ রেখে ঘর-দরজা ভাংচুর করে।
তিনি বলেন, তাদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে আমি ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাই। কিন্তু দুঃখজন বিষয় পুলিশ এসে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আমার ছেলেকেই থানায় ধরে নিয়ে যায়।
পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চাকরির প্রভাব খাটিয়ে হাসিব হাওলাদার বাদী হয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে চুরির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা করে। যার নম্বর জিআর ৬০/২০২৫। সেই মামলায় আমার নির্দেশ ছেলেকে শিশু আদালতের মাধ্যমে যশোর শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে প্রেরণ পাঠানো হয়।
লামিয়া বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি আব্দুর রহিমের জামিন হয়। এ ঘটনার পর থেকে হাসিব হাওলাদার ক্ষমতার প্রভাবে আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন এবং এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
তবে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মামলার বাদী বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী হাসিব হাওলাদার। তিনি বলেন, স্বর্ণালংকারসহ আমার বাসা থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। আব্দুর রহিম নিজেই চুরির বিষয়টি স্বীকার করেছে। তাছাড়া চুরির সময় তাকে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে সাক্ষীরা। তবে তাকে পুলিশে না দিয়ে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান হাসিব। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে তিনি প্রস্তাব দেন গোপনে দেখা করার জন্য।

অপরদিকে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ফেরদৌস হোসেন বলেন, ‘সন্দেহভাজন হিসেবে শিশু আব্দুর রহিমকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়। বিচারক তাকে শিশু-কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। তবে শিশুটির কাছে চুরির কোনো আলামত বা চোরাই মালামাল পাওয়া যায়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, বাদী মামলা দিতে আসলে তাকে তো ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। আর মামলা নেয়ার আগে তদন্তের প্রয়োজন নেই। বাদী মামলা দিয়েছে পুলিশ আসামি ধরে জেলে পাঠিয়েছে। এখন সে অপরাধী কিনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তবে শিশু ও তার মাকে নির্যাতন ও তাদের ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় ৯৯৯-এ কল করে আইনী সহায়তা চেয়েও পুলিশ কেন তাদের সহায়তা করলো না সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি।

আরো পড়ুন

পদ্মা মনসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত 

মো. সিরাজুল ইসলাম,কুঞ্জেরহাট: ভোলা বোরহানউদ্দিন উপজেলা পদ্মা মনসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *