শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

হাঁটুপানি জমে আছে বিদ্যালয়ের মাঠে

মহিব্বুল্যাহ ইলিয়াছ,মনপুরা (ভোলা) প্রতিনিধি: ভোলার মনপুরায় দক্ষিণ সাকুচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারপাশে গড়ে উঠেছে বসতিসহ নানা স্থাপনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি। তবে পানি বের হওয়ার কোনো পথ নেই। বর্ষা মৌসুমে থাকে হাঁটুপানি। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, দীর্ঘ ৮ বছর এর বেশি সময় জলাবদ্ধতার কারণে বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি, শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, খেলাধুলাসহ নানা কার্যক্রম।

জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া রহমানপুর গ্রামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয়রা। বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে আষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। বর্তমানে মোট ৪৮২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
স্কুলের মাঠে পানি জমে থাকার কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে এ সংকট আরও বেড়েছে। স্কুলের মাঠ এখন পানিতে থই থই করছে। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না । শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসার সময় পানিতে পড়ে গিয়ে অনেকের ইউনিফর্ম ভিজে যাচ্ছে। ভেজা পোশাকে দীর্ঘক্ষণ ক্লাস করায় অনেকেই ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। স্কুলের মাঠ আশপাশের চেয়ে নিচু হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই সেখানে পানি জমে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরের পর বছর এমন পরিস্থিতি থাকলেও সংকট থেকে উত্তরণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিগত বছরগুলোতে জনপ্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদের কোন বরাদ্দ না থাকায় কথা বলে এড়িয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে,বিদ্যালয়ের চারপাশে রয়েছে মার্কেটসহ নানা স্থাপনা।সামনের খেলার মাঠ, বিদ্যালয় ভবনের নিচে পানি জমে রয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পানি ভেঙে স্কুলে প্রবেশ করছে। বৃষ্টি হলে চারপাশের ময়লা-আবর্জনা ভেসে এসে মাঠের পানিতে জমা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ সাকুচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন এর পাশে তেমন কিছুই ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পাল্টেছে। এখন বিদ্যালয়ের ২টি একাডেমি কার্যালয় ১টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে । বিদ্যালয়ের দুই পাশে সড়ক, বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। কিন্তু সবগুলো করা হয়েছে স্কুলমাঠের চেয়ে উঁচু জায়গায়। তাই সামান্য বৃষ্টি হলেই স্কুলমাঠে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। নোংরা এই পানি পাড়ি দিয়েই শিশুরা প্রতিদিন ক্লাস করতে যায়।বছর এর পর বছর এ অবস্থা চলতে থাকলেও ভোগান্তি নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। জনপ্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন। তবে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের প্রশাসক হিসেবে জনস্বাস্থ্য উপ প্রকৌশল আসফুল ইসলাম থাকলেও তিনি এই জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুন আরা জুই বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই আমাদের স্কুলমাঠে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। অনেক কষ্ট করে কোনো রকমে ক্লাসে পৌঁছেছি।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহি বলেন, ‘বর্ষাকালে আমাদের স্কুলের খেলার মাঠে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমা হয়ে যায়। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা খেলাধুলা করতে পারি না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিক্রম চন্দ্র দাস জানান,প্রতিবছর বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।
দক্ষিণ সাকুচিয়া প্রসাশক ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতার দূর করার জন্য আমরা ইউনিয়ন পরিষদ এর পক্ষ থেকে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিচ্ছি। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যাটির সমাধান হবে।

মনপুরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন,আপাদত আমাদের মাঠ ভরাটে কোন বরাদ্ধ নেই । এর আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই মাঠটি মাটি ভরাট করা হয়েছিলো। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখন বনিক বলেন,ওই বিদ্যালয়ের জলাবদ্ধতার কথা শুনেছি। বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সমস্যার সমাধানের জন্য অবগত করা হবে।

আরো পড়ুন

বাবুগঞ্জের ইউএনও’র বদলি স্থগিতের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানববন্ধন

বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি।। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয়, জনবান্ধব ও মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *